পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ X প্রায় তুিন মাস পরে নিজের মহালে ফিরিব। সাভের কাজ এতদিনে শেষ হইল । এগারো ক্রোশ রাস্তা। এই পথেই সে-বার সেই পৌষসংক্রান্তির মেলায় আসিয়াছিলাম —সেই শাল-পলাশের বন, শিলাখণ্ড ছড়ানো মুক্তপ্রান্তর, উচুনীচু শৈলমাল। ঘন্টা-দুই চলিয়া আসিবার পরে দূরে দিথলয়ের কোলে একটি ধূসর রেখা দেখা গেল-মোহনপুর রিজার্ভ ফরেস্ট। এই পরিচিত দিক-জ্ঞাপক দৃশুটি আজ তিন মাস দেখি নাই। এতদিন এখানে আসিয়া আমাদের লবটুলিয়া ও নাঢ়া-বইহারের উপর এমন একটা টান জন্মিয়া গিয়াছে যেন ইহাদের ছাড়িয়া বেশী দিন কোথাও থাকিলে কষ্ট হয়, মনে হয়, দেশ ছাড়িয়া বিদেশে আছি। আজ তিন মাস পরে মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের সীমারেখা দেখিয়া প্রবাসীর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আনন্দ অনুভব করিলাম, যদিচ এখনও লবটুলিয়ার সীমানা এপান হইতে সাত-আট মাইল দূরে হইবে। ছোট একটা পাহাড়ের নীচে এক জায়গায় অনেকখানি জুড়িয়া জঙ্গল কাটিয়া কুসুম-ফুলের আবাদ করিয়াছিল—এখন পাকিবার সময়, কাটুনি জনেরা ক্ষেতে কাজ করিতেছে। আমি ক্ষেতের পাশের রাস্ত দিয়া যাইতেছি, হঠাৎ ক্ষেতের দিক্ হইতে কে আমায় ডাকিল—বাবুজী, ও বাবুজী—বাবুজী— চাহিয়া দেখি, আর-বছরের সেই মঞ্চী ! বিস্মিত হইলাম, আনন্দিতও হইলাম। ঘোড়া থামাইতেই মঞ্চী হাসি-মুখে কাস্তে-হাতে ছুটির ঘোড়ার পাশে দাড়াইল। বলিল—আমি দূর থেকেই ঘোড়া দেখে মালুম করেছি। কোথায় গিয়েছিলেন বাবুজী ? মঞ্চী ঠিক তেমনই আছে দেখিতে—বরং আরও একটু স্বাস্থ্যবতী হইয়াছে। কুসুম ফুলের পাপড়ির গুড়া লাগিয়া তাহার হাতখানা ও পরনের শাড়ীর সামনের দিকটা রাঙা । বলিলাম—বহরাবুরু পাহাড়ের নীচে কাজ পড়েছিল, সেখানে তিন মাস ছিলাম। সেখান থেকে ফিরছি। তোমরা এখানে কি করছ ? —কুমুম-ফুল কাটছি, বাবুজী। বেলা হয়ে গিয়েছে, এবেল নামুন এখানে। ঐ তো কাছেই খুপড়ি। আমার কোন আপত্তি টিকিল না। মঞ্চী কাজ ফেলিয়া আমাকে তাহদের খুপড়িতে লইয়া চলিল। মঞ্চীর স্বামী নক্ছেদী ভকৎ আমার আসার সংবাদ শুনিয়া ক্ষেত হইতে আসিল । নক্ছেদী ভকতের প্রথম-পক্ষের’স্ত্রী খুপড়ির মধ্যে রান্নার কাজ করিতেছিল, সেও আমাকে দেখিয়া খুশী হইল”।