পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ›8ጫ গেল। সে মন্ধীকে ও তাহার স্বামী নকছেদী ভকৎকে চেনে। একসঙ্গে বহু জায়গায় কাজ করিয়াছে নাকি। তাহারই মুখে শুনিলাম গত ফাল্গুন মাসে সে উহাদের আকবরপুর গবর্ণমেণ্ট খাসমহলে ফসল কাটিতে দেখিয়াছে। তাহার পর তাহারা যে কোথায় গেল সে জানে না । ফসলের মেলা শেষ হইয়া গেল জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি, এমন সময় একদিন সদর কাছারির প্রাঙ্গণে নকছেদী ভকৎকে দেখিয়া বিস্মিত হইলাম। নক্ছেদী আমার পা জড়াইরা হাউমাউ করিয়া কাদিয়া উঠিল। আরও বিস্মিত হইয়া পা ছাড়াইয়া লইয়া বলিলাম-কি ব্যাপার ? তোমরা এবার ফসলের সময় আস নি কেন ? মঞ্চী ভাল আছে তো ? কোথায় সে ? উত্তরে নক্ছেদী যাহা বলিল তাহার মোট মৰ্ম্ম এই, মঞ্চী কোথায় তাহা সে জানে না । থাসমহলে কাজ করিবার সময়েই মঞ্চী তাহদের ফেলিয়া কোথায় পালাইয়া গিয়াছে 1 অনেক খোজ করিয়াও তাহার পাত্ত পাওয়া যায় নাই । বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইলাম। কিন্তু দেখিলাম বৃদ্ধ নকছেদী ভকতের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি নাই, ষা কিছু ভাবনা সবই সেই বন্য মেয়েটির জন্য। কোথায় সে গেল, কে তাহাকে ভুলাইয়া লইয়া গেল, কি অবস্থায় কোথায় বা সে আছে। সস্তায় বিলাসদ্রব্যের প্রতি তাহার যে রকম আসক্তি লক্ষ্য করিয়াছি সে-সবের লোভ দেখাইয় তাহাকে ভুলাইয়া লইয়া যাওয়াও কষ্টকর নয়। তাঁহাই ঘটিয়াছে নিশ্চয় । জিজ্ঞাসা করিলাম—তার ছেলে কোথায় ? —সে নাই । বসন্ত হয়ে মারা গিয়েছে মাঘ মাসে । অত্যন্ত দুঃখিত হইলাম শুনিয়া। বেচারী পুত্ৰশোকেই উদাসী হইয়া, যেদিকে দু-চোখ যায়, চলিয়া গিয়াছে নিশ্চয়ই। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলাম—তুলসী কোথায় ? —সে এখানেই এসেছে। আমার ঙ্গেই আছে। আমার কিছু জমি দিন হুজুর। নইলে আমরা বুড়োবুড়ী, ফসল কেটে আর চলে না । মঞ্চী ছিল, তার জোরে আমরা বেড়াতাম । সে আমার হাত-পা ভেঙে দিয়ে গিয়েছে ! সন্ধ্যার পর নকৃছেদীর খুপড়িতে গিয়া দেখিলাম তুলসী তাহার ছেলেমেয়ে লইয়া চীনার দানা ছাড়াইতেছে। আমায় দেখিয়া কাদিয়া উঠিল। দেখিলাম মঞ্চী চলিয়া যাওয়াতে সেও যথেষ্ট দুঃখিত। বলিল—হুজুর, সব ঐ .ার দোষ। গোরমিন্টের লোক মাঠে সব টিকে দিতে এল, বুড়ে তাকে চার আনা পয়সা ঘুষ দিয়ে তাড়ালে। কাউকে টিকে নিতে দিল না। বললে, টিকে নিলে বসন্ত হবে। হুজুর, তিন দিন গেল না, মকীর ছেলেটার বসন্ত হল, মারাও গেল। তার শোকে সে পাগলের মত হয়ে গেল—থায় না, দায় না, শুধু কাদে । —তার পর ? - —তার পর হুজুর, খাসমহল থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিলে। বললে—বসন্তে তোমাদের লোক মারা গিয়াছে, এখানে থাকতে দেবো না ! এক ছোকরা রাজপুত মঞ্চীর দিকে নজর