পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক X 8& একটা চটের গদি পাতিয়া দিয়া বলিল—নামুন বাবুজী—বমুন একটু। ও গিয়েছে লবটুলিয়া, তেল মুন কিনে আনতে দোকানে। বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে । —তুমি একা এই ঘন-বনের মধ্যে আছ ? —ও-সব সয়ে গিয়েছে, বাবুজী। ভয়ডর করলে কি আমাদের গরীবদের চলে ? এক তো থাকতে হত ন!—কিন্তু অদৃষ্ট যে খারাপ। মঞ্চ যত দিন ছিল, জলে জঙ্গলে কোথাও ভয় ছিল না। কি সাহস, কি তেজ ছিল তার, বাবুজী ! তুলসী তাহার তরুণী সপত্নীকে ভালবাসিত। তুলসী ইহাও জানে এই বাঙালী বাৰু মকীর কথা শুনিতে পাইলে খুশী হইবে। তুলসীর মেয়ে মুরতিয়া বলিল—বাবুজী, একটা নীলগাইয়ের বাচ্চ ধরে রেখেছি, দেখবেন ? সেদিন আমাদের খুপড়ির পেছনের জঙ্গলে এসে বিকেলবেলা থস্থস্ করছিল—আমি আর ছনিয়া গিয়ে ধরে ফেলেছি। বড় ভাল বাচ্চা । বলিলাম—কি খায় রে ? স্বরতিরা বলিল—শুধু চীনার দানার ভূষি আর গাছের কচি পাতা। আমি কচি কেঁদ পাতা তুলে এনে দিই। তুলসী বলিল—দেখা না বাবুজীকে— স্বরতিয়া ক্ষিপ্ৰপদে হরিণীর মত ছুটয়া খুপড়ির পিছন দিকে অদৃপ্ত হইল। একটু পরে তাহার বালিকা-কষ্ট্রের চীৎকার শোনা গেল-আরে নীলগাইয়া তো ভাগলুয়া হৈ রে ছনিয়াউধার—ইধার—জলদি পাকুড়া— দুই বোনে হুটাপুটি করিয়া নীলগাইয়ের বাচ্চ পণকৃড়া ও করিয়া ফেলিল এবং ইপিাইতে হাপাইতে হাসিমুখে আমার সামনে অনিয়া হাজির করিল। অন্ধকারে আমার দেখিবার সুবিধার জন্ত তুলসী একখানা জলন্ত কাঠ উচু করিয়া ধরিল। মুরতিয়া বলিল কেমন, ভাল না বাবুজী " একে খাবার জন্তে কাল রাত্রে ভালুক এসেছিল। ওই মহুয়া গাছে কাল ভালুক উঠেছিল মহুয়া ফুল থেতে—তখন অনেক রাত-বাপ মা ঘুমোয়, আমি সব টের পাই—তারপর গাছ থেকে নেমে আমাদের খুপড়ির পেছনে এসে দাড়াল। আমি একে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে শুই রাতে—ভালুকের পায়ের শব্দ পেয়ে ওর মুখ হাত দিয়ে জোর করে চেপে আরও জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলুম— —ভয় করল না তোর, সুরতিয়া ? –ইস্! ভর বই কি! ভয় আমি করি নে। কাঠ কুড়তে গিয়ে জঙ্গলে কত ভালুকঝোড় দেখি—তাতেও ভয় করি নে। ভয় করলে চলে বাবুজী ? মুরতিয়া বিজ্ঞের মত মুখখানা করিল। বড় বড় কলের চিমনির মত লম্বা, কালো কেঁদ গাছের গুড়ি ঠেলির আকাশে উঠিয়াছে খুপড়ির চারিধারে, যেন কালিফোর্ণিয়া রেডউড গাছের জঙ্গল। বাদুড় ও নিশাচর কাক পাখীর ডান-ঝটাপটি ডালে ডালে, ঝোপে ঝোপে অন্ধকারে জোনাকির বাক জলিতেছে, খুপড়ির