পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>(2や বিভূতি-রচনাবলী শুনিলেও ধাওতাল কি আমায় টাকা দিবে ? বিদেশী লোক আমি । আমার কি সম্পত্তি আছে এখানে যে এতগুলি টাকা বিনা বন্ধকে আমায় দিবে ? কথাটা একটু সমীহের উপরই বলিলাম । —সান্থজী, লেখাপড়াটা কিন্তু আমার নামেই করতে হবে। জমিদারের নামে হবে না । ধাওতাল সাহু আশ্চৰ্য্য হইবার সুরে বলিল – লেখাপড়া কিসের ? আপনি আমার বাড়ী ব’য়ে এসেছেন সামান্য টাকার অভাব পড়েছে, তাই নিতে । এ তে আসবার দরকারই ছিল না, হুকুম করে পাঠালেই টাকা দিতাম। তার পর যখন এসেছেনই—তখন লেখাপড়া কিসের ? আপনি স্বচ্ছন্দে নিয়ে যান, যখন কাছারিতে আদায় হবে, আমায় পাঠিয়ে দিলেই হবে । বলিলাম-আমি হাগুনোট দিচ্ছি, টিকিট সঙ্গে করে এনেছি। কিংবা তোমার পাকা খাতা বার কর, সই করে দিয়ে যাই। ধাওতাল সাহু হাত জোড় করিয়া বলিল—মাপ করুন হুজুর। ও কথাই তুলবেন না। মনে বড় কষ্ট পাব। কোন লেখাপড়ার দরকার নেই, টাকা আপনি নিয়ে যান। আমার পীড়াপীড়িতে ধাওতাল কর্ণপাতও করিল না। ভিতর হইতে আমায় নোটের তাড়া গুনিয়া আনিয়া দিয়া বলিল-হুজুর, একটা কিন্তু অনুরোধ আছে । —কি ? —এ-বেলা যাওয়া হবে না । সিধা বার করে দিই, রান্নাথাওয়া করে তবে যেতে পাবেন । পুনরায় আপত্তি করিলাম, তাহ ৪ টিকিল না। তহসিলদারকে বলিলাম—বনোয়ারীলাল, রাধতে পারবে তো ? আমার দ্বারা সুবিধে হবে না । বনোয়ারী বলিল—ত চলবে না, হুজুর, আপনাকে রণধতে হবে। আমার রান্না খেলে এ পাড়াগায়ে আপনার দুর্নাম হবে। আমি দেখিয়ে দেব এখন। বিরাট এক সিধা বাহির করিয়া দিল ধাওতাল সাহুর নাতি । রন্ধনের সময় নাতি-ঠাকুরদ। মিলিয়া নানা রকম উপদেশ-পরামর্শ দিতে লাগিল রন্ধন সম্বন্ধে । ঠাকুরদাদার অনুপস্থিতিতে নাতি বলিল—বাবুজী, ঐ দেখেছেন আমার ঠাকুরদাদা, ওঁর জন্তে সব যাবে। এত লোককে টাকা ধার দিয়েছেন বিনা মুদে,বিনা বন্ধকে, বিনা তমস্বকে—এখন আর টাকা আদায় হতে চায় না । সকলকে বিশ্বাস করেন, অথচ লোকে কত ফাকিই দিয়েছে। লোকের বাড়ী বয়ে টাকা ধার দিয়ে আসেন । , গ্রামের আর একজন লোক বসিয়া ছিল, সে বলিল—বিপদে আপদে সাহুজীর কাছে হাত পাতলে ফিরে যেতে কখনো কাউকে দেখি নি বাবুজী । সেকেলে ধরনের লোক, এতবড় মহাজন, কখনো আদালতে মোকদ্দমা করেন নি। আদালতে যেতে ভয় পান । বেজায় ভীতু আর ভালমানুষ। সেদিন যে-টাকা ধাওতাল সাহুর নিকট হইতে আনিয়াছিলাম, তাহ শোধ দিতে প্রায়