পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ➢¢ዓ ছ'মাস দেরি হইয়া গেল-এই ছ'মাসের মধ্যে ধাওতাল সাহু আমাদের ইসমাইলপুর মহালের ত্রিসীমানা দিয়া ইটে নাই, পাছে আমি মনে করি যে সে টাকার তাগাদ করিতে আসিয়াছে। ভদ্রলোক আর কাহাকে বলে । 3. প্রায় বছর-থানেক রাখালবাবুদের বাড়ী যাওয়া হয় নাই, ফসলের মেলার পরে একদিন সেখানে গেলাম। রাখালবাবুর স্ত্রী আমার দেখিয়া খুব খুশি হইলেন। বলিলেন—আপনি আর আসেন না কেন দাদা, কোন খোঁজখবর নেন না—এই নিৰ্ব্বান্ধব জায়গায় বাঙালীর মুখ দেখা যে কি—আর আমাদের এই অবস্থায়— বলিয়া দিদি নি:শব্দে কঁদিতে লাগিলেন । আমি চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম। বাড়ীঘরের অবস্থা আগের মতই হীন, তবে এবার ততটা যেন বিশৃঙ্খল নয়। রাখালবাবুর বড় ছেলেটি বাড়ীতেই টিনের মিস্ত্রীর কাজ করে— সামান্তই উপার্জন—তবু যা হয় সংসার একরকম চলিতেছে। রাখালবাবুর স্ত্রীকে বললাম—ছোট ছেলেটিকে অস্তুত ওর মামার কাছে কাশীতে রেখে একটু লেখাপড়া শেখান। তিনি বলিলেন—আপন মামা কোথায় দাদা ? দু-তিনখানা চিঠি লেখা হয়েছিল এত বড় বিপদের খবর দিয়ে—দশটি টাকা পাঠিয়ে দিয়ে সেই যে চুপ করল—আর দেড় বছর সাডশব্দ নেই। তার চেসে দাদা, ওরা মকাই কাটবে, জনার কাটবে, মহিষ চরাবে—তবুও তেমন মামার দোরে যাবে না । আমি তখনই ঘোড়ায় ফিরিব—দি । কিছুতেই আসিতে দিলেন না। সেবেলা থাকিতে হইবে। তিনি কি-একটা থাবার করিয়া আমায় না খাওয়াইয়া ছাড়িবেন না । অগত্য অপেক্ষা করিতে হইল। মকাইয়ের ছাতুর সহিত ঘি ও চিনি মিশাইয়া এক রকম লাজ বাধিয়া ও কিছু হালুয়া তৈরী করিয়া দিদি খাইতে দিলেন। দরিদ্র সংসারে যতটা আদর-অভ্যর্থনা করা যাইতে পারে, তাহার ক্রটি করিলেন না । বলিলেন—দাদা, ভাদ্র মাসের মকাই রেখেছিলাম আপনার জন্ত তুলে । আপনি ভূটাপোড়া খেতে ভালবাসেন, তাই । জিজ্ঞাসা করিলাম—মকাই কোথায় পেলেন ? কিনেছিলেন ? —না। ক্ষেতে কুড়তে যাই, ফসল কেটে নিয়ে গেলে যেসব ভাঙা, ঝর ভুট্টা চাষীরা ক্ষেতে রেখে যায়—গায়ের মেয়েরাও যায়, আমিও যাই ওদের সঙ্গে—এক ঝুডি, দেড় ঝুড়ি করে রোজ কুড়োতাম । - আমি অবাক হইয়া বলিলাম—ক্ষেতে কুড়তে যেতেন ?