পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tty বিভূতি-রচনাবলী —া, রাত্রে তোম, কেউটের পেত না। গায়ের কত মেয়েরা তো যায়। তাদের সঙ্গে এই ভাদ্র মাসে কম্সে-কম দশ টুক্‌রি ভুট্টা কুড়িয়ে এনেছিলাম। মনে বড় দুঃখ হইল। এ কাজ গরীব গাঙ্গোতার মেয়েরা করিয়া থাকে—এদেশের ছত্রি বা রাজপুত মেয়ের গরীব হইলেও ক্ষেতের ফসল কুড়াইতে যায় না। আর, একজন বাঙালীর মেয়েকে এ-কাজ করিতে শুনিলে মনে বড়ই লাগে। এই অশিক্ষিত গাঙ্গেীতাদের গ্রামে বাস করিয়া দিদি এ সব হীনবৃত্তি শিথিয়াছেন—সংসারের দারিদ্র্যও যে তাহার একটা প্রধান কারণ সে-বিষয়ে ভূল নাই। মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারিলাম না, পাছে মনে কষ্ট দেওয়া হয়। এই নিঃস্ব বাঙালী পরিবার বাংলার কোন শিক্ষা-সংস্কৃতি পাইল না, বছর কয়েক পরে চাষী গাঙ্গোতীয় পরিণত হইবে, ভাষায়, চালচলনে, হাবভাবে । এখন হইতেই সে-পথে অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছে । রেলস্টেশন হইতে বহু দূরে অজ পল্লীগ্রামে আমি আরও দু-একটি এরকম বাঙালী-পরিবার দেখিয়াছি। এই সব পরিবারে মেয়ের বিবাহ দেওয়া যে কি দুঃসাধ্য ব্যাপার! এমনি আর একটি বাঙালী ব্রাহ্মণ পরিবার জানিতাম—দক্ষিণবিহারে এক অজ গ্রামে তারা থাকিতেন। অবস্থা নিতান্তই হীন, বাড়ীতে র্তাদের তিনটি মেয়ে ছিল, বডটির বয়স একুশ-বাইশ বছর, মেজেটির কুড়ি, ছোটটিরও সতের । ইহাদের বিবাহ হয় নাই, হইবার কোন উপায়ও নাই— সঘর জোটানো, বাঙালী পাত্রের সন্ধান পাওয়া এসব অঞ্চলে অত্যন্তই কঠিন । বাইশ বছরের বড় মেয়েটি দেখিতে সুশ্রী—এক বর্ণও বাংলা জানে না—আকৃতি-প্রকৃতিতে মাটি দেহাতী বিহার মেয়ে-মাঠ হইতে মাথায় মোট করিয়া কলাই আনে, গমের ভূষি আনে । এই মেয়েটির নাম ছিল ধ্রুবা । পুরাদস্তুর বিহারী নাম । তাহার বাবা প্রথমে এই গ্রামে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারী করিতে আসিয়া চাষবাসের কাজও আরম্ভ করেন। তার পর তিনি মারা যান, বড় ছেলে, একেবারে হিন্দুস্থানী—চাষবাস দেখাশুনা করিত, বয়স্থ ভগ্নীদের বিবাহের যোগাড় সে চেষ্টা করিয়াও করিতে পারে নাই । বিশেষতঃ পণ দিবার ক্ষমতা তাদের আদৌ ছিল না জানি। ধ্রুব ছিল একেবারে কপালকুণ্ডলা , আমাকে ভাইয়া অর্থাৎ দাদা বলিয়া ডাকিত । গায়ে অসীম শক্তি, গম পিষিতে, উডুখলে ছাতু কুটিতে, মোট বহিয়া আনিতে, গরু-মহিষ চরাইতে চমৎকার মেয়ে, সংসারের কাজকর্শ্বে ঘুণ। তাহার দাদা এ প্রস্তাবও করিয়াছিলেন যে, এমন যদি কোন পাত্ৰ পান, তিনটি মেয়েকেই এক পাত্রে সম্প্রদান করিবেন। মেয়ে তিনটিরও নাকি অমত ছিল না। মেজ মেয়ে জবাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম—বাংলা দেখতে ইচ্ছে হয় ? জবা বলিয়াছিল—নেই ভেইয়া, উহাকো পানি বডিড নরম ছে— শুনিয়াছিলাম বিবাহ করিতে ধ্রুবারও খুব আগ্রহ। সে নিজে নাকি কাহাকে বলিয়াছিল তাহাকে যে বিবাহ করিবে, তাহার বাড়ীতে গরুর দোহাল বা উদুখলওয়ালী ডাকিতে হইবে