পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉やb" বিভূতি-রচনাবলী স্বচ্ছ দেখায়—আর নাঢ় বইহারের ও লবটুলিয়ার যত বন্ত পক্ষীর বর্ণক বাসা ভাঙ্গিয়া যাওয়াতে কতক সরস্বতী সরোবরের বনে, কতক এখানে ও মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টে আশ্রয় লইয়াছে —তাহীদের কি অবিশ্রাস্ত কুজন ! ঘন বন । এমন ঘন নির্জন আরণ্যভূমিতে মনে একটি অপূৰ্ব্ব শান্তি ও মুক্ত অবাধ স্বাধীনতার ভাব আনে—কত গাছ কত ডালপালা, কত বনফুল, কত বড় বড় পাথর ছড়ানে— যেখানে সেখানে বসিয়া থাক, শুইয়া পড়, অলস জীবনমুহূৰ্ত্ত প্রস্ফুটিত পিয়াল বৃক্ষের নিবিড় ছায়ায় বসিয়া কাটাইয়া দাও—বিশাল নির্জন আরণ্যভূমি তোমার শ্রান্ত স্নায়ুমণ্ডলীকে জড়াইয়া দিবে। আমরা পাহাড়ে উঠতে আরম্ভ করিয়াছি—বড় বড় গাছ মাথার উপরে স্বৰ্য্যের আলোক আটকাইয়াছে—ছোট বড় ঝরনা কল কল শব্দে বনের মধ্য দিয়া নামিয়া আসিতেছে— হরীতকী গাছ, কেলিকদম্ব গাছের সেগুন পাতার মত বড় বড় পাতায় বাতাস বাধিয় শন শন শব হইতেছে। বন-মধ্যে ময়ূরের ডাক শোনা গেল। আমি বলিলাম—যুগলপ্রসাদ, চীহড় ফলের গাছ কোথায়, খোজ । চীহড় ফলের গাছ পাওয়া গেল আরও অনেক উপরে উঠিয়া। স্থলপদ্মের পাতার মত পাতা, খুব মোট কাঠময় লতা, আঁকিয়া বাকিয়া অন্ত গাছকে আশ্রয় করিয়া উঠিয়াছে। ফলগুলি শিমজাতীয়, তবে শিমের দুখানি খোলা কটকী চটিজুতার মত বড়, অমনি কঠিন ও চওড়া—ভিতরে গোল বীচি । আমরা শুকনে লতাপাত জালাইয়া বীচি পুড়াইয়া খাইয়াছি —ঠিক যেন গোল আলুর মত আস্বাদ । অনেক দূর উঠিয়াছি। ওই দুরে মোহনপুরা ফরেস্ট—দক্ষিণে ওই আমাদের মহাল, ওই সরস্বতী কুওঁীর তীরবর্তী জঙ্গল অস্পষ্ট দেখা যাইতেছে। ওই নাঢ়া বইহারের অবশিষ্ট সিকিভাগ বন—ওই দূরে কুশী নদী মোহনপুর রিজার্ভ ফরেস্টের পূর্ব সীমানা ধেসিয়া প্রবাহিত—নিম্নের সমতল ভূমির দৃপ্ত যেন ছবির মত ! —ময়ুর! ময়ুর—হুজুর, ঐ দেখুন, ময়ুর — প্রকাও, একটা ময়ুর মাথার উপরেই এক গাছের ডালে বসিয়া । একজন সিপাহী বন্দুক লইয়া আসিয়াছিল, সে গুলি করিতে গেল, আমি বারণ করিলাম। যুগলপ্রসাদ বলিল—বাবুজী, একটা গুহা আছে পাহাড়ের মধ্যে জঙ্গলে কোথায়—তার গায়ে সব ছবি আঁকা আছে—কত কালের কেউ জানে না, সেটাই খুঁজছি। হয়তো বা প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের হাতে আঁকা বা খোদাই ছবি গুহার কঠিন পাথরের গারে! পৃথিবীর ইতিহাসের লক্ষ লক্ষ বৎসরের যবনিকা এক মুহূৰ্ত্তে অপসারিত হইয়া সময়ের উজানে কোথায় লইয়া গিয়া ফেলিবে আমাদের! প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহাঙ্কিত ছবি দেখিবার প্রবল আগ্রহে জঙ্গল ঠেলিয়া গুহা খুজিয়া বেড়াইলাম-গুহাও মিলিল, যে অন্ধকার তাহার ভিতরে ঢুকিবার সাহস হইল না। ঢুকিলেই বা অন্ধকারের মধ্যে কি দেখিব ! অন্য একদিন তোড়জোড় করিয়া আসিতে হইবে—আজ