পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9१२ বিভূতি-রচনাবলী বন্ধনমুক্ত, ব্রাত্য ইহাদের জীবন—সমাজ নাই, সংস্কার নাই, ভিটার মায়া নাই নীল আকাশের নীচে সংসার রচনা করিয়া, বনে শৈলশ্রেণীর মধ্যস্থ উপত্যকায়, বড় নদীর নির্জন চরে ইহাদের বাস । আজ এখানে, কাল সেখানে । ইহাদের প্রেম-বিরহ, জীবন-মৃত্যু সবই আমার কাছে নূতন ও অদ্ভুত। কিন্তু সকলের চেয়ে অদ্ভুত লাগিল বর্তমানে এই লোকটির উন্নতির আশা। এই লবটুলিয়ার জঙ্গলে সামান্ত পাচ বিঘা কি দশ বিঘা জমিতে গম চাষ করিয়া সে কিরূপ উন্নতির আশা করে বুঝিরা উঠা কঠিন। লোকটির বয়স পঞ্চাশ পার হইয়াছে। নাম বলভদ্র সেঙ্গাই, জাতে চাষ কালোয়ার অর্থাৎ কলু। এই বয়সে সে এখনও আশা রাখে জীবনে উন্নতি করিবার। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম—বলভদ্র, এর আগে কোথায় ছিলে ? —হুজুর, মুঙ্গের জেলায় এক দিয়াড়ার চরে। দু-বছর সেখানে ছিলাম—তার পরে অজন্মা হয়ে মকাই ফসল নষ্ট হয়ে গেল। সে-জায়গায় উন্নতি হবার আশা নেই দেখলাম। হুজুর, সংসারে সবাই উন্নতি করবার জন্তে চেষ্টা পায় । এইবার দেখি হুজুরের আশ্রয়ে— রাজু পাড়ে বলিল—আমার ছটা মহিষ ছিল যখন প্রথম এখানে আসি—এখন হয়েছে দশটা ৷ লবটুলিয়া উন্নতির জায়গা— .جسمہ বলভদ্র বলিল—মহিষ আমায় এক জোড়া কিনে দিও পাডেজী । এবার ফসল হোক, সেই টাকা দিয়ে মহিষ কিনতেই হবে—ও ভিন্ন উন্নতি হয় না । গনোরী ইহাদের কথা শুনিতেছিল। সেও বলিল—ঠিক কথা ! আমারও ইচ্ছে আছে মহিষ দু-একটা কিনব। একটু কোথাও বসতে পারলেই— মহলিখারূপের পাহাড়ের গাছপালা এবং তাহারও পিছনে ধনুঝরি শৈলমালা অস্পষ্ট হইয়া ফুটিয়াছে জ্যোৎস্নার আলোয়, একটু একটু শীত বলিয়া ছোট একটি অগ্নিকুণ্ড করা হইয়াছে, আমাদের সামনে—এক দিকে রাজু পাড়ে ও যুগলপ্রসাদ, অন্য দিকে বলভদ্র ও তিন-চারটি নবাগত প্রজা । আমার কাছে কি অদ্ভুত ঠেকিতেছিল ইহাদের বৈষয়িক উন্নতির কথা। উন্নতি সম্বন্ধে ইহাদের ধারণা অভাবনীয় ধরনের উচ্চ নয়—ছ'টি মহিষের স্থানে দশটা মহিষ না-হয় বারোটা মহিষ–এই স্বদুর দুর্গম অরণ্য ও শৈলমাল বেষ্টিত বস্ত দেশেও মানুষের মনের আশাআকাজক্ষ কেমন, জানিবার সুযোগ পাইয়া আজকার জ্যোৎস্না-রাতটাই আমার নিকটে অপূৰ্ব্ব রহস্যময় মনে হইল। শুধু জ্যোৎস্নারাত কেন, মহলিখারূপের ঐ পাহাড়, দূরে ওই ধনারি শৈলমাল, ঐ পাহাড়ের উপরকার ঘন বনশ্রেণী। কেবল যুগলপ্রসাদ এসব বৈষয়িক কথাবাৰ্ত্তায় থাকে না। ও আর এক ধরনের ব্রাত্য মন লইয়া পৃথিবীতে আসিয়াছে—জমি-জমা, গরু মহিষের আলোচনা করিতে ভালও বাসে না, তাহাতে যোগও দেয় না। সে বলিল—সরস্বতী কুণ্ডীর পূর্ব পাড়ের জঙ্গলে যতগুলো হংসলত লাগিয়েছিলাম, সবগুলো