পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ›ማጫ মাপ | তীসরা সাল থেকে খাজনা দিও। কেমন রাজি ? কুন্ত লজ্জাজড়িত মুখে আমার দিকে চাহিয়া বলিল—জী হুজুর মেহেরবান। পরে হঠাৎ বিহালার মত কাদিয়া ফেলিল । আমার ইঙ্গিতে আসরফি তাহাকে লইয়া চলিয়া গেল। সপ্তদশ পরিচ্ছেদ X সন্ধ্যার পরে লক্ট্রিলিয়ার নূতন বস্তিগুলি দেখিতে বেশ লাগে। কুয়ালা হইয়াছে বলিয়া জ্যোৎস্না একটু অস্পষ্ট, বিস্তীর্ণ প্রান্তরব্যাপী কৃষিক্ষেত্র, দূরে দূরে দু-পাঁচটা আলো জলিতেছে বিভিন্ন বস্তিতে । কত লোক, কত পরিবার অল্পের সংস্থান করিতে আসিয়াছে আমাদের মহালে—বন কাটিয়া গ্রাম বসাইয়াছে, চাষ আরম্ভ করিয়াছে । আমি সব বস্তির নামও জানি না, সকলকে চিনিও না। কুয়াসাৰ্বত জ্যোৎস্নালোকে এখানে ওখানে দূরে নিকটে ছড়ানো বস্তিগুলি কেমন রহস্যময় দেখাইতেছে । যে-সব লোক এই সব বস্তিতে বাস করে, তাহীদের জীবনও আমার কাছে এই কুয়াসাচ্ছন্ন জ্যোৎস্নামী রাত্রির মত রহস্যাবৃত। ইহাদের কাহারও কাহারও সঙ্গে আলাপ করিয়া দেখিয়াছি—জীবন সম্বন্ধে ইহাদের দৃষ্টিভঙ্গী, ইহাদের জীবনযাত্ৰপ্রণালী আমার বড় অদ্ভূত লাগে। প্রথম ধরা যাক ইহাদের খাদ্যের কথা । আমাদের মহালের জমিতে বছরে তিনটি খাদ্যশস্ত জন্মায়—ভাদ্র মাসে মকাই, পৌষ মাসে কড়াই এবং বৈশাখ মাসে গম। মকাই খুব বেশ হয় না, কারণ ইহার উপযুক্ত জমি বেশী নাই। কলাই ও গম যথেষ্ট উৎপন্ন হয়, কলাই বেশী, গম তাহার অৰ্দ্ধেক। সুতরাং লোকের প্রধান খাদ্য কলাইয়ের ছাতু। ধান একেবারেই হয় না—ধানের উপযুক্ত নাবাল-জমি নাই। এ অঞ্চলের কোথাও—এমন কি কড়ারী জমিতে কিংবা গবর্ণমেণ্ট খাসমহালেও ধান হয় না। ভাত জিনিসটা সুতরাং এখানকার লোকে কালেভদ্রে থাইতে পায়—ভাত খাওয়াটা শখের বা বিলাসিতার ব্যাপার বলিয়া গণ্য। দু-চার জন খাস্তবিলাসী লোক গম বা কলাই বিক্রয় করিয়া ধান কিনিয়া আনে বটে, কিন্তু তাহদের সংখ্যা আঙুলে গোনা যায়। তার পর ধরা যাক ইহাদের বাসগৃহের কথা । এই যে আমাদের মহালের দশ হাজার বিঘা জমিতে অগণ্য গ্রাম বসিয়াছে—সব গৃহস্থের বাড়ীই জঙ্গলের কণশ ছাওয়া, কাশ ভাটার বেড়া, কেহ কেহ তাহার উপর মাটি লেপিয়াছে, কেহ কেহ তাহা করে নাই। এদেশে বঁাশগাছ আদৌ নাই, সুতরাং বনের গাছের, বিশেষ করিয়া কেঁদ ও পিয়াল ডালের বাজ, খুটি ও আড়া দিয়াছে ঘরে। ধর্মের কথা বলিয়া কোন লাভ নাই। ইহারা যদিও হিন্দু, কিন্তু তেত্রিশ কোটি দেবতার दि. ब्र. ९-->२