পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ծՊԵ বিভূতি-রচনাবলী মধ্যে ইহার হনুমানজীকে কি করিয়া বাছিরা বাহির করিয়া লইয়াছে জানি না—প্রত্যেক বর্তীতে একটা উচু হনুমানজীর ধ্বজ থাকিবেই—এই ধ্বজার রীতিমত পূজা হয়, ধ্বজার গারে পিন্ধর লেপা হয়। রাম-সীতার কথা কচিং শোনা যায়, তাহদের সেবকের গৌরব তাহদের দেবত্বকে একটু বেশী আড়ালে ফেলিয়াছে। বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, কালী প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজার প্রচার তত নাই—আদৌ আছে কিনা সন্দেহ, অন্ততঃ আমাদের মহালে তো আমি দেখি নাই । ভুলিয়া গিয়াছি, একজন শিবভক্ত দেখিয়াছি বটে। তার নাম দ্রোণ মাহাতে, জাতিতে গাঙ্গেীত । কাছারিতে কোথা হইতে কে একটা শিলাখণ্ড আনিয়া আজ নাকি দশ-বারো বছর কাছারির হকুমানজীর ধ্বজার নীচে রাখিয়া দিয়াছে—সিপাহীরা মাঝে মাঝে পাথরখানাতে সিছুর মাথায়, এক ঘটি জলও কেউ কেউ দেয়। কিন্তু পাথরখানা বেশীর ভাগ অনাদৃত অবস্থাতেই পড়িয়া থাকে। কাছারির কিছুদূরে একটা নূতন বস্তি আজ মাস-দুই গড়িয়া উঠিয়াছে—দ্রোণ মাহীতে সেখানে আসিয়া ঘর বাধিয়াছে। দ্রোণের বয়স সত্তরের বেশী ছাড়া কম নয়—প্রাচীন লোক বলিয়াই তাহার নাম দ্রোণ, আধুনিক কালের ছেলেছোকরা হইলে নাকি নাম হুইত ডোমন, লোধাই, মহারাজ ইত্যাদি। এসব বাবুগিরি নাম সেকালে বাপ-মায়ে রাথিতে লজ্জাবোধ করিত । যাহা হউক, বৃদ্ধ দ্রোণ একবার কাছারি আসিয়া হনুমান-ধ্বজার নীচে পাথরখানা লক্ষ্য করিল। তার পর হইতে বৃদ্ধ কলুবলিয়া নদীতে প্রাতঃস্নান করিয়া এক ঘটি জল প্রত্যহ আনিয়া নিয়মিতভাবে পাথরের উপরে ঢালিত ও সাতবার পরম ভক্তিভরে প্রদক্ষিণ করিয়া সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া তবে বাড়ী ফিরিত। দ্রোণকে বলিয়াছিলাম-কলালিয়া তো এক ক্রোশ দূর, রোজ যাও সেখানে, তার চেয়ে ছোট কুণ্ডীর জল আনলেই পার— দ্রোণ বলিল-মহাদেওজী স্রোতের জলে তুষ্ট থাকেন, বাবুজী। আমার জন্ম সার্থক ষে ওঁকে রোজ জল দিয়ে স্নান করাতে পাই । ভক্তও ভগবানকে গড়ে। দ্রোণ মাহাতোর শিবপূজার কাহিনী লোকমুখে বিভিন্ন বস্তিতে ছড়াইয়া পড়িতেই মাঝে মাঝে দেখি দু-পাচজন শিবের পূজারী নর-নারী যাতায়াত শুরু করিল। এ অঞ্চলে এক ধরনের সুগন্ধ ঘাস জঙ্গলে উৎপন্ন হয়, ঘাসের পাতা বা ডাটা হাতে লইয়া আম্ৰাণ লইলে চমৎকার স্ববাস পাওয়া যায়। ঘাস যত শুকায়, গন্ধ তত তীব্র হয়। কে একজন সেই ঘাস আনিয়া শিবঠাকুরের চারিধারে রোপণ করিল। একদিন মটুকনাথ পণ্ডিত আসিয়া বলিল—বাবুজী,—একজন গাঙ্গোত কাছারির শিবের মাথায় জল ঢালে, এটা কি ভাল হচ্ছে ? বলিলাম—পণ্ডিতজী, সেই গাঙ্গোতাই ওষ্ট ঠাকুরটিকে লোক-সমাজে প্রচার করেছে যতদূর দেখতে পাচ্ছি। কই তুমিও তো ছিলে, এক ঘটি জল তো কোনদিন দিতে দেখি নি তোমায়।