পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক እዋቖ রাগের মাথায় খেই হারাইয়া মটুকনাথ বলিয়া বসিল—ও শিবই নয় বাবুজী। ঠাকুর প্রতিষ্ঠা না করলে পূজো পাওয়ার যোগ্য হয় না। ও তো একখানা পাথরের হুড়ি । —তবে আর বলছ কেন ? পাথরের মুড়িতে জল দিলে তোমার আপত্তি কি ? সেই হইতেই দ্রোণ মাহাতে কাছারির শিবলিঙ্গের চার্টার্ড পূজারী হইয়া গেল। কাৰ্ত্তিক মাসে ছট-পরব এদেশের বড় উৎসব। বিভিন্ন টোলা হইতে মেয়ের হলুদছোপানো শাড়ী পরিয়া দলে দলে গান করিতে করিতে কলালিয়া নদীতে ছট, ভাসাইতে চলিয়াছে। সারাদিন উৎসবের ধূম। সন্ধ্যায় বন্তিগুলির কাছ দিয়া যাইতে যাইতে ছট-পরবের পিঠে ভাজার ভরপুর গন্ধ পাওয়া যায়। কত রাত পৰ্য্যস্ত ছেলেমেয়েদের হাসি কলরব, মেয়েদের গান—যেখানে নীল গাইয়ের জেরা গভীর রাত্রে দৌড়িয়া যাইত, হায়েনার হাসি ও বাঘের কালি ( অভিজ্ঞ ব্যক্তি জানে, বাঘে অবিকল মামুষের গলায় কাসির মত এক প্রকার শব্দ করে ) শোনা যাইত—সেখানে আজকাল কলহান্তমুখরিত, গীতিরবপূর্ণ উৎসবদীপ্ত এক বিস্তীর্ণ জনপদ । ছট-পরবের সন্ধ্যায় ঝলুটোলায় নিমন্ত্রণ করিতে গেলাম। শুধু এই একটি টোলায় নয়—পনেরোটি বিভিন্ন টোলা হইতে ছট-পরবের নিমন্ত্রণ পাইয়াছি কাছারি মুদ্ধ সকল আমলা । ঝল্পটােলার মোড়ল ঝন্ধু মাহাতোর বাড়ী গেলাম প্রথমে । ঝন্তু মাহাতোর বাড়ীর এক পাশে দেখি এখনও জঙ্গল কিছু কিছু আছে। ঝৰু উঠানে এক ছেড়া সামিয়ান টাঙাইয়াছে—তাহারই তলায় আমাদের আদর করিয়া বসাইল। টোলার সকল লোক ফস1 ধুতি ও মেরজাই পরিয়া সেখানে ঘাসে-বোন একজাতীয় মাছরের আসনে বসিয়া আছে। বলিলাম—খাইবার অনুরোধ রাথিতে পারিব না, কারণ অনেক স্থানে যাইতে হইবে। ঝন্তু বলিল—একটু মিষ্টিমুখ করা ই হবে। মেয়েরা নইলে বড় ক্ষুন্ন হবে, আপনি পায়ের ধুলো দেবেন বলে ওরা বড় উৎসাহ করে পিঠে তৈরী করেছে। উপায় নাই। গোষ্ঠবাৰু মুহুরী, আমি ও রাজু পাড়ে বসিয়া গেলাম। শালপাতায় কয়েকখানি আটা ও গুড়ের পিঠে আসিল—এক একখানি পিঠে এক ইঞ্চি পুরু ইটের মত শক্ত, ছুড়িয়া মারিলে মানুষ মরিয়া না গেলেও দস্তুরমত জখম হয় । অথচ প্রত্যেকখানা পিঠে ছাচে ফেলা চন্দ্রপুলির মত বেশ লতাপাত কাটা। ছাচে ফেলিবার পরে তবে বিয়ে ভাজা হইয়াছে। অত যত্বে মেয়েদের হাতে তৈরী পিষ্টকের সদ্ব্যবহার করিতে পারিলাম না। আধখানা ! অতিকষ্টে খাইয়াছিলাম। না মিষ্টি, না কোন স্বাদ । বুঝিলাম গাঙ্গোত মেয়ের খাবার দাবার তৈরি করিতে জানে না। রাজু পাড়ে কিন্তু চার-পাঁচখানা সেই বড় বড় পিঠে দেখিতে দেখিতে খাইরা ফেলিল এবং আমাদের সামনে চক্ষুলজ্জা বশতঃই বোধ হয় আর চাহিতে পারিল না.