পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Xboe বিভূতি-রচনাবলী ঝলুটোলা হইতে গেলাম লোধাইটোলা । তারপর পর্বতটোলা, ভীমদাসটোলা, আসরফিটোল, লছমনিয়াটোলা। প্রত্যেক টোলায় নাচগান, হাসিবাজনার ধুম। আজ সারারাত ইহার ঘুমাইবে না। এ-বাড়ী ও বাড়ী খাওয়া দাওয়া করিয়া নাচগান করিরাই কাটাইরা দিবে। একটি ব্যাপার দেখির আনন্দ হইল, মেয়ের সব টোলাতেই যত্ন করিয়া নাকি খাবার তৈরি করিয়াছে আমাদের জন্য। ম্যানেজার বাবু নিমন্ত্রণে আসিবেন শুনিয়া তাহারা অত্যন্ত উৎসাহের ও যত্বের সহিত নিজেদের চরম রন্ধন-কৌশল প্রদর্শন করিয়া পিষ্টক গড়িয়াছে । মেয়েদের সহৃদয়তার জন্ত মনে মনে যথেষ্ট কৃতজ্ঞ হইলেও তাহীদের রন্ধন-বিদ্যার প্রশংসা করিয়া উঠিতে পারিলাম না, ইহা আমার পক্ষে খুবই দুঃখের বিষয়। ঝল্পটোলার অপেক্ষ নিকৃষ্টতর পিষ্টকের সহিতও স্থানে স্থানে পরিচয় ঘটিল। সব জায়গায়ই দেখি রঙীন শাড়ী-পরা মেয়ের কৌতুহলপূর্ণ চোখে আড়াল হইতে ভোজনরত বাংগালী বাবুদের দিকে চাহিয়া আছে। রাজু পাড়ে কাহাকেও মনে কষ্ট দিল না—পিষ্টক ভক্ষণের সীমা অতিক্রম করিয়া রাজু পাড়ে ক্রমশ অসীমের দিকে চলিতে লাগিল দেখিয়া আমি গণনার হাল ছাড়িয়া দিলাম—সুতরাং সে কয়খানা পিষ্টক খাইয়াছিল বলিতে পারিব না । শুধু রাজু কেন—নিমন্ত্রিত গাঙ্গোতাদের মধ্যে সেই ইটের মত কঠিন পিষ্টক এক একজন এক কুড়ি দেড় কুড়ি করিয়া খাইল—চোখে না দেখিলে বিশ্বাস করা শক্ত যে সেই জিনিস মানুষে অত খাইতে পারে। নাঢ়া বইহারে ছনিয়া ও সুরতিয়াদের ওখানে গেলাম । মুরতিয়া আমার দেখিয় ছুটিয়া আসিল। —বাবুজী, এত রাত ক’রে ফেললেন ? আমি আর মা দু-জনে বসে আপনার জন্তে আলাদা করে পিঠে গড়েছি—আমরা ইা করে বসে আছি আর ভাবছি এত দেরি হচ্ছে কেন । আমুন, বক্ষন । নকৃছেদী সকলকে খাতির করিয়া বসাইল । তুলসীকে খুব যত্ন করিয়া খাইবার আসন করিতে দেখিয়া মনে মনে হাসিলাম। ইহাদের এখানে খাইবার অবস্থা কি আর আছে ? মুরতিয়াকে বলিলাম—তোমার মাকে বল পিঠে তুলে নিতে। এত কে খাবে ? স্বরতিরা বিস্মিত দৃষ্টিতে আমার দিকে চাহিয়া বলিল—ও কি বাবুজী, এই ক’খানা খাবেন না ? আমি আর ছনিয়াই ত পনর-ষোলখানা করে খেয়েছি। থান—আপনি খাবেন বলে ওর ভেতরে মা কিশমিশ দিয়েছে—ভাল আটা এনেছে বাবা ভীমদাসটোলা থেকে— খাইব না বলিয়া ভাল করি নাই। সারা বছর এই বালক-বালিকা এসব মুখাষ্ঠের মুখ দেখিতে পার না। এদের কত কষ্টের, কত আশার জিনিস ! ছেলেমানুষকে খুশী করিবার জন্য মরীয়া হইয়া দুইখানা পিষ্টক খাইর ফেলিলাম।