আরণ্যক ծեծ স্বরডিয়াকে খুশী করিবার জন্ত বলিলাম—চমৎকার পিঠে। কিন্তু সব জায়গায় কিছু কিছু খেয়েছি বলে খেতে পারলুম না স্বরতিরা। অার একদিন এসে হবে এখন। রাজু পাড়ের হাতে একটা ছোটখাটো বোচক । সে প্রত্যেকের বাড়ী হইতে ছাদ বাধিয়াছে, এক একখানি পিষ্টকের ওজন বিবেচনা করিলে রাজুর বোচকার ওজন দশ-বারে সেরের কম ত কোন মতেই হইবে না । রাজু খুব খুশী । বলিল—এ পিঠে হঠাৎ নষ্ট হয় না হুজুর, দু-তিন দিন আর আমার রাখতে হবে না । পিঠে খেয়েই চলবে। কাছারিতে পরদিন সকালে কুন্তী একখানি পিতলের থালা লইয়া আসিয়া আমার সামনে সসঙ্কোচে স্থাপন করিল। এক টুকরা ফসর্ণ নেকড়া দিয়া থালাখানা ঢাকা । বলিলাম—ওতে কি কুন্ত ? কুন্তা সলজ্জ কণ্ঠে বলিল ছট-পরবের পিঠে বাবুজী। কাল রাত্রে দু-বার নিয়ে এসে ফিরে গিয়েছি । বলিলাম—কাল অনেক রাত্রে ফিরেছি, ছট-পরবের নেমস্তন্ন রাখতে বেরিয়েছিলাম। আচ্ছা রেখে দাও, খাব এখন । ঢাকা খুলিয়া দেখি, থালায় কয়েকখানি পিষ্টক, কিছু চিনি, দুটি কলা, একখণ্ড ঝুনা নারিকেল, একটা কলম্বা লেবু। বলিলাম—বাঃ, বেশ পিঠে দেখছি । কুন্তী পূৰ্ব্ববৎ মৃদ্ধস্বরে সসঙ্কোচে বলিল—বাবুজী, সবগুলো মেহেরবানি করে থাবেন। আপনি খাবেন বলে আলাদা করে তৈরি করেছি। তবুও আপনাকে গরম খাওয়াতে পারলাম না, বড় দুঃখ রইল । —কিছু হয় নি তাতে, কুন্তা । আমি সবগুলো খাব। দেখতে বড় চমৎকার দেখাচ্ছে। কুন্তা প্রণাম করিয়া চলিয়া গেল । ૨ একদিন মুনেশ্বর সিং সিপাহী আসিয়া বলিল—হুজুর, ওই বনের মধ্যে গাছের নীচে একটা লোক ছেড়া কাপড় পেতে শুয়ে আছে—লোকজনে তাকে বস্তিতে ঢুকতে দেয় না—ঢ়িল ছুড়ে মারে, আপনি হুকুম করনে ত তাকে নিয়ে আসি । কথাটা শুনিয়া আশ্চৰ্য্য হইলাম। বৈকাল বেলা, সন্ধ্যার বেশী দেরি নাই, শীত তেমন না হইলেও কাৰ্ত্তিক মাস, রাত্রে যথেষ্ট শিশির পড়ে, শেষ রাত্রে বেশ ঠাণ্ড । এ অবস্থায় একটা লোক বনের মধ্যে গাছের তলায় আশ্রয় লইয়াছে কেন, মোক তাকে ঢ়িল ছুড়িয়াই বা মারে কেন বুঝিতে পারিলাম না।
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৯৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।