পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ծե՛(? ধরলেই হোচট খেয়ে পড়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে আমারও পা খোড়া হবে। বদলে নিয়ে আসি । তাহাকে আশ্বস্ত করিলাম। সজ্জন সিং ভাল সওয়ার, সে কতবার পূর্ণিয়ায় মোকদম তদারক করিতে গিয়াছে এই ঘোড়ায়। পূর্ণিয়া যাইতে হইলে কেমন পথে যাইতে হয় যুগলপ্রসাদের তাহা অজ্ঞাত নয় নিশ্চয়ই । শীঘ্রই কারো নদী পার হইলাম। তার পর অরণ্য, অরণ্য-সুন্দর, অপূৰ্ব্ব, ঘন নির্জন অরণ্য। পূর্বেই বলিয়াছি এ জঙ্গলে মাথার উপরে গাছপালার ভালে ডালে জডাজড়ি নাই—কেঁদচার, শালচারা, পলাশ, মহুয়া, কুলের অরণ্য-প্রস্তুরাকীর্ণ রাঙা মাটির ডাঙা, উচুনীচু। মাঝে মাঝে মাটির উপর বন্ত হস্তীর পদচিহ্ন । মানুষজন নাই । ইপি ছাড়িয়া বাচিলাম লবটুলিয়ার নূতন তৈরী ঘিঞ্জি কুত্ৰ টোলা ও বন্তি এবং একঘেয়ে ধূসর, চৰা জমি দেখিবার পরে। এরকম আরণ্য প্রদেশ এদিকে আর কোথাও নাই। এই পথের সেই দুটি বন্ত গ্রাম—বুরুডি ও কুলপাল—বেল বারোটার মধ্যেই ছাড়াইলাম । তার পরেই ফাকা জঙ্গল পিছনে পড়ির রহিল—সম্মুখে বড় বড় বনস্পতির ঘন অরণ্য। কীৰ্ত্তিকের শেষ, বাতাস ঠাণ্ডা—গরমের লেশ মাত্রও নাই । দূরে দূরে ধনারি পাহাড়শ্রেণী বেশ স্পষ্ট হইয়া ফুটিল। সন্ধ্যার পরে কাছারিতে পৌছিলাম। যে বিড়িপাতার জঙ্গল আমাদের স্টেট নীলামে ডাকিয়া লইয়াছিল, এ-কাছারি সেই জঙ্গলের ইজারাদারের ! লোকটা মুসলমান, শাহাবাদ জেলায় বাড়ী। নাম আবদুল ওয়াহেদ। খুব খাতির করিয়া রাখিয়া দিল। বলিল-সন্ধের সময় পৌঁছেছেন, ভাল হয়েছে বাবুজী। জঙ্গলে বড় বাঘের ভর হয়েছে। নির্জন রাত্রি । বড় বড় গাছে শন শন করিয়া বাতাস বাধিতেছে। কাছারির বারান্দার বসিবার ভরসা পাইলাম না কথাটা শুনিয়া । ঘরের মধ্যে জানাল খুলিয়া বসিয়া গল্প করিতেছি—হঠাৎ কি একটা জন্তু ডাকিয়া উঠিল বনের মধ্যে। যুগলকে বলিলাম—কি ও ? যুগল বলিল—ও কিছু না, ছড়াল। অর্থাৎ নেকড়ে বাঘ। একবার গভীর রাত্রে বনের মধ্যে হয়েনার হাসি শোনা গেল—হঠাৎ শুনিলে বুকের রক্ত জমিয়া যায় ভয়ে, ঠিক যেন কৗশরোগীর হাসি, মাঝে মাঝে দম বন্ধ হইয়া যায়, মাঝে মাঝে হাসির উচ্ছ্বাস । * পরদিন ভোরে রওনা হইয়া বেল ন-টার মধ্যে দোবর পাল্লার রাজধানী চকুমকিটোলায় পৌঁছানো গেল। ভানুমতী কী খুই আমার অপ্রত্যাশিত আগমনে। তার মুখচোখে খুশী যেন চাপিতে পারিতেছে না, উপচাইয়া পড়িতেছে। —আপনার কথা কপলও ভেবেছি বাবুজী । এতদিন আসেন নি কেন ?