পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী واشند ভানুমতীকে একটু লম্বা দেখাইতেছে, একটু রোগীও বটে। তাছাড়া মুখশ্ৰী আছে ঠিক তেমনি লাবণ্যভরা, সেই নিটোল গড়ন তেমনি আছে! —নাইবেন তো ঝরনায় ? মহুয়া তেল আনব না কড়া তেল ? এবার বর্ষার ঝরনার কি মুনার জল হয়েছে দেখবেন চলুন। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করিয়া আসিতেছি—ভানুমতী ভারি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সাধারণ সাঁওতাল মেয়েদের সঙ্গে তার সেদিক দিয়া তুলনাই হয় না-তার বেশভূষা ও প্রসাধনের সহজ সৌন্দৰ্য্য ও রুচিবোধই তাহাকে অভিজাতবংশের মেয়ে বলিয়া পরিচয় দেয়। যে-মাটির ঘরের দাওয়ায় বসিয়া আছি, তাহার উঠানের চারিধারে বড় বড় আসান ও অৰ্জুন গাছ। এক বাঁকি সবুজ বনটিয়া সামনের আসান গাছটার ডালে কলরব করিতেছে। হেমন্তের প্রথম, বেলা চড়িলেও বাতাস ঠাণ্ডা। আমার সামনে আধ মাইলেরও কম দূরে ধনারি পাহাড়শ্রেণী, পাহাড়ের গা বাহিয়া নামিয়া আসিয়াছে চেরা সিঁথির মত পথ— একদিকে অনেক দূরে নীল মেঘের মত দৃশ্যমান গয়া জেলার পাহাড়শ্রেণী। বিড়ির পাতার জঙ্গল ইজার লইয়া এই শাস্ত জনবিরল বন্ত প্রদেশের পল্লবপ্রচ্ছায় উপত্যকার কোনো পাহাড়ী ঝরনার তীরে কুটির বাধিয়া বাস করতাম চিরদিন! লবটুলিয়া তো গেল, ভানুমতীর দেশের এ-বন কেহ নষ্ট করিবে না। এ-অঞ্চলে মরুমকীকর ও পাইওরাইট, বেশী মাটিতে, ফসল তেমন হয় না—হইলে এ-বন কোন কালে ঘুচিয়া যাইত। তবে যদি তামার খনি বাহির হইয়া পড়ে, সে স্বতন্ত্র কথা.. তামার কারখানার চিমনি, ট্রলি লাইন, সারি সারি কুলি-বস্তি, ময়লা জলের ড্রেন, এঞ্জিনঝাড় কয়লার ছাইয়ের স্ত,প—দোকান-ঘর, চায়ের দোকান, সস্তা সিনেমায় ‘জোরানী-হাওয়া ‘শের শমশের’ ‘প্রণয়ের জের (ম্যাটিনিতে তিন অনা, পুৰ্ব্বাহ্লে আসন দখল করুন )—দেশী মদের দোকান, দরজীর দোকান। হোমিও ফাৰ্ম্মেসী (সমাগত দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয় )। আদি ও অকৃত্রিম আদর্শ হিন্দু হোটেল। কলের বাশীতে তিনটার সিটি বাজিল । ডাকুমতী মাথায় করিয়া এঞ্জিনেয় ঝাড় কয়লা বাজারে ফিরি করিতে বাহির হইয়াছে— ক-ই-লা চা-ই-ই-চার পয়সা ঝুড়ি । ভানুমতী তেল আনিয়া সামনে দড়িাইল । ওদের বাড়ীর সবাই আসিয়া আমাকে নমস্কার করিয়৷ বিরিয়া দাড়াইল। ভানুমতীর ছোট কাক নবীন যুবক জগরু একটা গাছের ডাল চুলিতে চুলিতে আসিয়া আমার দিকে চাহিয়া আসিল। এই ছেলেটিকে আমি বড় পছন্দ করি! রাজপুত্রের মত চেহারা ওর, কালোর উপরে কি রূপ! এদের বাড়ীর মধ্যে এই যুবক এবং ভানুমতী, এদের দুজনকে দেখিলে সত্যই যে ইহারা বঙ্ক জাতির মধ্যে অভিজাতবংশ, তা মনে না হইয়া পারে না । বলিলাম—কি জগরু, শিকার-টিকার কেমন চলেছে ? জগর হাসিয়া বলিল—আপনাকে আজই খাইয়ে দেৰ বাবুজী, ভাববেন না। বলুন কি