পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

<е о বিভূতি-রচনাবলী —সে তো বুঝলাম—যা খেয়ে ফেলেচ, তার ঠ্যাল এখন সামলাবে কে ? বোসে, দুটো বড়ি নিয়ে যাও—শিউলি পাতার রস আর মধু দিয়ে খেও, ঘাখো কেমন থাকো— ওষুধ নিয়ে রামলাল চলে যাচ্ছিল, গঙ্গাচরণ ডেকে বললে—ওহে রামলাল, ভালো কথা, এবার নতুন সর্ষে হয়েছে ক্ষেতে ? কাঠা পাঠিয়ে দিও তো। আমি বাজারের তেল খাইনে বাপু, সর্ষে দিয়ে কলুবাড়ী থেকে ভাঙিয়ে নিই। যে অজ্ঞে । আমার ছেলে ওবেল দিয়ে যাবে’খন । তেমন সর্ষে এবার হয় নি চক্কত্তি মশাই। বিষ্টি হওয়াতে সর্ষে গাছে পোকা ধরে গেল কাৰ্ত্তিক মাসে । রামলালকে বিদায় দিয়ে গঙ্গাচরণ সগৰ্ব্বে স্ত্রীর কাছে বলল—দেখলে তো ? যাকে যা বলবো, না বলুক দিকি কেউ? সে জো নেই কারো। স্বামীগৰ্ব্বে অনঙ্গ-বেয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে আদরের স্বরে বললে—এখন নেয়ে নাও দিকি ? বেলা তেতঃরে হয়েচে । সেই কখন বেরিয়েচ—দুটো ছোলা-গুড় মুখে দিয়ে নাও—এখুনি তো তোমার ছত্তিরের দল আসতে শুরু করবে। তেল দিই— নদীতে স্নান সেরে এসে জলখাবার অর্থাৎ ছোলা ভিজে ও এক টুকরো আখের পাটালি খেতে খেতে গঙ্গাচরণের মুখ তৃপ্তিতে ভরে উঠলো। অনঙ্গ জিজ্ঞেস করলে—ই গা, পাঠশালা খোলার কথা কিছু হোল বিশ্বেস মশায়ের সঙ্গে ? —সব হয়ে যাবে। ওঁর নিজেরা ঘর বেঁধে দেবেন বললেন-- —ছেলে হবে কি রকম ? —দুটো গায়ের ছেলেমেয়ে পাচ্চি—তাছাড়া প্রাইবিট পড়ার ছাত্তর তো আছেই হাতে । এ দিগরে লেখাপডা জানা লোক কোথায় পাবে ওরা ? সকলের এখন চেষ্টা দাড়িয়েচে যাতে আমি থাকি । —সে তো ভালই। উড়ে উড়ে বেড়িয়ে কি করবে—এখানেই থাকা যাক। আমার বড্ড পছন্দ হয়েচে । কোন জিনিসের অভাব নেই। মুখের কথা খসতে যা দেরি— —রও, সব দিক থেকে বেঁধে ফেলতে হবে ব্যাটাদের। চাষা গী, জিনিস বলে পত্তর বলে, ডাল বলে, মূলে বেগুন বলে—কোনো জিনিসের অভাব হবে না। এ গারে পুরুত্ত নেই ওরা বলচে, চকত্তি মশাই, আমাদের লক্ষ্মীপুজো, মনসা পুজোটাও কেন আপনি করুন না ? —সে বাপু আমার মত নেই । —কেন—কেন ? - —কাপালীদের পুরুতগরি করবে ? শুদূর-যাজক বামুন হোলে লোকে বলবে কি ? —কে টের পাচ্ছে বলে ? এ অজ পাড়াগারে কে দেখতে আসচে–তুমিও যেমন ? —কিন্তু ঠাকুরপুজো জানো ? না জেনে পুজো-আচ্চা করা—ওসব কাঁচা-থেকে দেবতা, বড় ভয় হয় । ছেলেপিলে নিয়ে ঘর করা —মত ভয় করলে সংসার করা চলে না। পাজিতে আজকাল যষ্টিপুজো মাকালপুজো সব লেখা থাকে—দেখে নিলেই হবে।