পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত e》 —তুমি যা বোঝে—কোনো ভয় নেই বেী—তুমি দেখে নিও, এ ব্যাটাদের সব দিক থেকে বেঁধে ফেললে কোনো ভাবনা হবে না আমাদের সংসারে । অনঙ্গও তা জানে। স্বামীর ক্ষমতা সম্বন্ধে তার অসীম বিশ্বাস। কিন্তু কথা তা নয়— এক জায়গায় টিকে থাকতে পারলে সব হতে পারে, কিন্তু স্বামীর মন উড়, উড়, কোনো গায়ে এক বছরের বেশি তো টিকে থাকতে দেখা গেল না। বামুদেবপুরেই বা মন্দ ছিল কি ? একটু সুবিধে হয়ে উঠতে না উঠতে উনি অমনি বললেন—চলে বোঁ, এখানে আর মন টিকচে না । অমন করে উড়ে উড়ে বেড়ালে কি কখনো সংসারে উন্নতি হয় ? তবে একথা ঠিক বামুদেবপুরে শুধু পাঠশালায় ছেলেপড়ানোতে মাসে আট দশ টাকা আয় হত –আর এখানে জিনিসপত্র পাওয়া যায় কত ? উন্নতি হয় তো এখান থেকেই হবে । উনি যদি মন বসিয়ে থাকেন তবে সবই হতে পারে সে জানে। একটু পরে চার-পাচটি ছোট ছোট ছেলে শ্লেট বই নিয়ে দড়িবাধা দোয়াত ঝুলিয়ে গঙ্গাচরণের কাছে পড়তে এল । গঙ্গাচরণ বললে, আমি এই খেয়ে উঠলাম, একটু শুয়ে নিই—তোরা পুরোনো পড়া স্কাখ ততক্ষণ । ওরে নস্ক, তোদের বাড়ীতে বেগুন হয়েছে ? একটি ছোট ছেলে বললে—হঁ্যা গুরুমশায়— গঙ্গাচরণ ধমক দিয়ে বললে–গুরুমশার কি রে ? সার বলবি। শিখিয়ে দিইচি না ? বল— ছেলেটি ভরে ভয়ে বললে –ই্যা সার— —য গিয়ে বসে লিথগে—বেগুন নিয়ে আসবি কাল, বুঝলি ? —আনবো সার। ছেলে ক’টি দাওয়ায় বসে এমন চীৎকার জুড়ে দিলে যে তাদের ত্রি-সীমানায় কারো নিদ্রা বা বিশ্রাম সম্পূর্ণ অসম্ভব। অনঙ্গ স্বামীকে বললে—ওগো তোমার ছাত্তরের যে কানের পোকা বের করে দিলে । ওদের একটু থামিয়ে দাও— গঙ্গাচরণ হেকে বললে—এই! পাণ থাক এখন, সবাই শটকে কড়াংকে লিখে রাখ শেলেটে। আমি ঘুমিয়ে উঠে দেখবো। তারপর স্ত্রীকে খুশির স্বরে বললে—ছটা হয়েচে আরও সাত-আটটা কাল আসছে পুৰ পাড়া থেকে । ভীম ঘোষ বলছিল, বাবা ঠাকুর, আমাদের পাড়ার সব ছেলে আপনার কাছে পাঠাবো। নেতা কাপালীর কাছে পড়লে যদি ছেলে মানুষ হোত, তা হোলে আর ভাবনা ছিল না। ব্রাহ্মণ হোল সমাজের সব কাজের গুরুমশায়। কথায় বলে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত । গঙ্গাচরণ মন দিয়ে ছেলে পড়ায় বটে। ঘুম থেকে উঠে সে ছেলেদের নিয়ে অনেকক্ষণ ব্যস্ত রইল—কাউকে নামত পড়ায়, কাউকে ইংরেজী ফাস্ট বুক পড়ায়—ফাকিবাজ গুরুমশায়