পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত २०१ অনঙ্গ এক ধরনের হাসলে, যার মানে হচ্ছে আর ভান করে কি করবো ? গঙ্গাচরণ বললে—কেমন ধরে ফেলেচি কিনা ? অনঙ্গ প্রত্যুত্তরে আর একবার হেসে বললে—না করি, করতে দেখেচিতে । বাসুদেবপুরে চক্কত্তি-বাড়ী চ খেতে সবাই। আমি গিল্পীর কাছে বসে বসে দেখতাম না বুঝি ? গঙ্গাচরণ পাশের গ্রামে যখন মাঠের পথ দিয়ে বেরিয়ে গেল তখন বেলা বেশ পড়ে এসেচে। সারাদিনের তাজা খর রোদে উলু ও কাশবনে কেমন মুন্দর একটা সোদা গন্ধ। শীতও আজ পড়েচে মন্দ নয় । একটা লোক খেজুর গাছে মাটির ভীড় নিয়ে উঠচে দেখে গঙ্গাচরণ ডেকে বললে—বলি ও ছিদাম, একদিন খেজুর-রস খাওয়াও বাবা । লোকটা গাছের ওপর থেকেই বললে–গুরুমশায় ? কাল সকালে পেটিয়ে দেবেন একটা ছেলে এক ভীড় যেন নিয়ে যায়— গঙ্গাচরণের মনে যথেষ্ট আনন্দ ও সন্তোষ এই ভেবে যে, কেউ তার কথা এখানে ঠেলতে পারে না। সবাই মানে, যার কাছে যে জিনিস চাওয়া যায়, কেউ দিতে অস্বীকার করে না । বামুদেবপুরে এমন ছিল না, ভাতছালাতেও না । পাশের গ্রামের কোনো নাম নেই—“পশ্চিমপাড়া’ বলে সবাই। এর একটা কারণএসব গ্রাম আজ কয়েক বৎসর হল বসেচে। আগে এসব পতিত মাঠ বা অনাবাদী চর ছিল, এদেশের চাষীদের জমির অভাব ছিল না, তাদের মধ্যে কেউ এসে সব জঙ্গল ও নলখাগড়া ভরা পতিত জমিতে চাষ করতে রাজী নয়। অন্ত জেলা থেকে কাপালী জাতীয় চাষীরা এসে এই অনাবাদী চরে সো- ফলিয়েচে, এরাই নতুন গ্রামগুলো বসিয়েচে—গ্রামের নামকরণ এখনও হয় নি । পশ্চিমপাড়াতে ঢুকেই গ্রামের নওপ ঘর। বিকেলে দু-পাঁচজনে লোক এখানে বলে তামাক পোড়াচ্চে । একজন গঙ্গাচরণকে দেখে বললে—কি মনে করে দাদাঠাকুর ? পেরনাম হই। আমুন— গঙ্গাচরণ ভড়ং দেখাবার জন্তে ফার নিচে থেকে পৈতেটা বার করে আঙুলে জড়িয়ে হাত তুলে বললে--জয়ন্ত । তারপর বসে একবার এদিকওদিক তাকিয়ে বললে-- এটা বেশ ঘরখানা করচে তো ? भूख हब ? t দলের মধ্যে একজন গঙ্গাচরণকে তামাক খাওয়াবার জন্তে কলাপাত আনতে ছুটলো । একজন বললে—পূজো হয় নি দাদাঠাকুর। সামনের বারে করবার ইচ্ছে আছে—আচ্ছা, আপনি পারবেন দাদাঠাকুর ? ' * গঙ্গাচরণ অবজ্ঞাস্বচক হাসি হেসে চুপ করে রইল, উত্তর দিলে না। ওতে পলার থাকে না।