পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ বিভূতি-রচনাবলী ম্যালেরিয়াতে অনঙ্গ-বেী মরে যাওয়ার যোগাড় হোল। তখন নতুন গায়ের কাপালীদের সঙ্গে বাসুদেবপুরের হাটেই আলাপ হয় গঙ্গাচরণের, কপালীরা পাঠশালার মাস্টার চাইচে শুনে গঙ্গাচরণ যেতে রাজী হয়। ওরাও খুব আগ্রহ করে নিয়ে যেতে চায়। সেই থেকেই নতুন গায়ে বাস। অনঙ্গ বলে—কালী ঘুমূলে নাকি ? বাবা কি ঘুম তোদের ? মতি ঘুমজড়িত স্বরে বলে—বামুন-দিদি, ঘুমেও নি এখনো ? রাত যে পুইয়ে এল! ঘুমিয়ে পড়ে । পুবে ফসর্ণ হোল— —তোর মুণ্ডু হোল পোড়ারমুখী— অনঙ্গ-বেী ভাবছিল তার জীবনে কত জায়গায় যাওয়া হোল, কত কি দেখা হোল! তার বয়সী ক'টা মেয়ে এমন নানা জায়গায় বেডিয়েচে ? ওই তো তারই সমবয়সী হৈম রয়েচে হরিহরপুরে, তার শ্বশুরবাডীর গ্রামে । কোথাও যায় নি, কোনো দেশ দেখে নি । সে ভাবলে—ভালো কাপড পরতে পারি নে, খেতে পাই নি তাই কি ? আমার মত এত জায়গা বেড়িয়েচে হৈম ? কত জায়গা। ধর হরিহরপুর, সেখান থেকে ভাতছালা, ভাতছালা থেকে বাসুদেবপুর—তার পর এখন নতুনগ। উ-কথাটা কালীকে বলবার জন্তে সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ডাক দিলে—ও কালী, কালী, একটা কথা শোন না ? মতি ঘুমজড়িত স্বরে বললে—বামুন-দিদি, তুমি জালালে দেখচি, ঘুমুতি দেব না রাত্তিরে ? কালী ঘুমিয়ে গিয়েচে অনেকক্ষণ, ওকে আর ডাকাডাকি কোরো না। রাত পুইয়ে গেল যে । অনঙ্গ-বোঁ হেসে তার গায়ে একটা কাটি ছুড়ে মেরে বললে—দূর পোড়ারমুখী— যে দুদিন অনঙ্গ এখানে রইল, এমন নিছক আনন্দের দুটি দিন ওর জীবনে কতকাল আসে নি। চলে আসবার দিন মতি মুচিনী কেঁদে আকুল হোল। সে এ গারে আর থাকতে চায় না, অনঙ্গ-বেীয়ের সঙ্গে চলে যাবে। কালী গোয়ালিনী আধ সের ভাল গাওয়া ঘি ও দুটাে বড় মানকচু নিয়ে এসে দিলে। মতি খেজুর গুড়ের পাটালি নিয়ে এলো খেজুর গাছের বাকলায় বেঁধে । গঙ্গাচরণ জিনিসপত্র দেখে বললে—বা:, অনেক সওদা করে এনেছ দেখচি– অনঙ্গ হাসি হাসি মুখে বললে—দাম দিতে হবে আমাকে কিন্তু। —ভাল কথাই তো । কেমন দেখলে ? —অতি চমৎকার। আমার যে কি ভাল লেগেচে । মতি এল, কালী এল, গায়ের কত ঝি-বোঁ দেখতে এল— —ওরা এখনো ভোলে নি আমাদের ? —ভূলে যাবে? সবাই বলে এখানে এসে আবার বাস করুন বামুন-দিদি। হ্যা গা, পদ্মবিলের ধারে একখানা ঘর বাধো না কেন আমার বড় সাধ কিন্তু ।