পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সং :ኃፃ —আবার ভাতছাৰ্ল ফিরে যাবে ? সে হয় না। পাঠশালা জমে উঠেচে । এখন কি নড় যায়, গেলেই লোকসান। —তুমি যা ভালো বোঝে। আমার কিন্তু বাপু ওখানে একখানা ঘর বধিবার বড় ইচ্ছে। গঙ্গাচরণ সেদিন পাঠশাল জমিয়ে বসেচে, সামনের পথ দিয়ে একজন পথ-চলতি লোক যেতে যেতে হঠাৎ দাড়িয়ে পাঠশালার মধ্যে ঢুকে বললে—এটা পাঠশালা ? -टैं । —মশাই দেখচি ব্রাহ্মণ, একটু তামাক খাওয়াতে পারেন? আমিও ব্রাহ্মণ। নমস্কার। —বক্ষন বসুন, নমস্কার—ওরে— গঙ্গাচরণের ইঙ্গিতে একজন ছাত্র তামাক সাজতে ছুটলো । আগন্তুক লোকটির পায়ে পুরোনো ও তালি দেওয়া ক্যাম্বিসের জুতো, গারে মলিন পিরান, হাতে একগাছি তৈলপক সরু বাঁশের ছড়ি। পায়ে জুতো থাকা সত্ত্বেও সাদা ধুলো হাটু পর্য্যন্ত উঠেচে । লোকটি একটা কেরোসিন কাঠের বাক্সের ওপর ক্লান্তভাবে বসে পড়লো । গঙ্গাচরণ বললে—মশায়ের নাম ? —আজ্ঞে দুৰ্গা বাড়য্যে। নিবাস, কুমুরে নাগরখালি, আড়ঘাটার সন্নিকট । আমিও আপনার মত ইস্কুল মাস্টার।—অম্বিকপুর চেনেন? এখান থেকে পাচ কোশ পথ। অম্বিকপুরে লোয়ার প্রাইমারী ইস্কুলে সেকেন পণ্ডিত। —বেশ, বেশ । তামাক ইচ্ছে করুন— —আগে আমায় একটু দল খাওয়াতে পারেন ? ...ডাব খাবেন ? ওরে পাচু, যাও বাবা, হরি কপিালীর চারাগাছ থেকে আমার নাম করে দুটো ডাব চট করে পেড়ে নিয়ে এসে তো ? আগন্তুক লোকটি প্রশংসমান দৃষ্টিতে গঙ্গাচরণের দিকে চেয়ে বললে—বা, আপনার দেখচি এখানে বেশ পসার। গঙ্গাচরণ মুছ হেসে চুপ করে রইল। বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের পসার-প্রতিপত্তির কথা নিজের মুখে বলে না । ইতিমধ্যে ডাব এসে পড়লো। ভাবের জল খেয়ে দুর্গাপদ বাড়য্যে আরামে নিঃশ্বাস ফেলে হকে হাতে নিয়ে সজোরে ধূমপান করতে লাগলো। আপন মনেই বললে—বেশ আছেন আপনি—বেশ আছেন— গঙ্গাচরণ বিনীতভাবে বললে—আপনাদের ৰাপ-মায়ের আশীৰ্ব্বাদে এক রকম চলে যাচ্চে— 酸 —না, না, বেশ আছেন। দেখে আনন্দ হয়, আমার মতই ইস্কুল মাস্টার একজন, ভাল ভাবে থাকতে দেখলেই আনন্দ হয়।