পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২১৯ —আপনি আর আমি সমব্যবসায়ী। তাই আপনার কাছে এত কথা খুলে বললাম। কিছু মনে করবেন না যেন। আচ্ছ আজ উঠি। অনেকদূর যেতে হবে। —আবার যখন এদিকে আসবেন, দেখা দেবেন দয়া করে। —সে আর বলতে মশাই ? একদিন আমার পরিবারকে নিয়ে এসে আপনাদের বাড়ীতে আলাপ করিয়ে দেবো । আচ্ছা আসি, নমস্কার— গ্রামের বিশ্বাস মশায়ের নাতিটি কাকতালীয় ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলো গঙ্গাঙ্গুণের শান্তিস্বস্ত্যয়নের পরে । এতে গঙ্গাচরণের পসার আরও বেড়ে গেল গ্রামের লোকদের কাছে । একদিন একজন লোক এসে গঙ্গাচরণকে বললে—আমাদের গায়ে একবার যেতে হচ্ছে পণ্ডিত মশায়— —এসো, বসে। কোথায় বাড়ী ? —কামদেবপুর, এখান থেকে তিন কোশ । আপনার নাম শুনে আসচি। সবাই বললে, পণ্ডিত মশায় বড় গুণী লোক। আমাদের গায়ের আশপাশে বড় ওলাউঠোর ব্যায়রাম চলচে । আপনাকে যেয়ে আমাদের গা বন্ধ করতে হবে । k গঙ্গাচরণ গ৷ বন্ধ করা কথাটা প্রথম শুনলে । তবুও আন্দাজ করে নিল লোকটা কি চাইচে । তাদের গ্রামে যাতে ওলাউঠার অমুথ না ঢোকে, এজন্তে মন্ত্র পড়ে গ্রামের চারিদিক গণ্ডি টেনে দিয়ে মহামারীর আগমন বন্ধ করতে হবে, এই ব্যাপার। কাচা লোকের মত গঙ্গাচরণ তখনই বলে উঠলে না, হ্যা, এখুনি করে দেবে, তাতে আর কি’ ইত্যাদি । সে গভীর ভাবে তামাক টেনে যেতে লাগলো, উত্তরে ‘হ্যা কি না’ কিছুই বললে না । 难 লোকটি উদ্বিগ্নমুরে বললে—ঠাকুর মশার, হবে তো আমাদের ওপর দয়া ? গঙ্গাচরণ স্থির ভাবে বললে—তাই ভাবচি । —কেন পণ্ডিত মশায় ? এ আপনাকে হাতে নিতেই হবে— —বডড শক্ত কাজ । বডড শক্ত— কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ। পরে লোকটা পুনরায় আকুল ভাবে বললে--তবে কি হবে না ? গঙ্গাচরণ নীরব। দুমিনিট। —পণ্ডিত মশায় ? —বাপু হে, অমন বক বক্‌ কোরো না । মাথা ধরিয়ে দিলে যে বকে । দাড়াও, ভাবতে मांe- * লোকটা ধমক খেয়ে চুপ করে রইল, যদিও সে বুঝতে পারলে না এতক্ষণ সে এমন কি বকছিল, যাতে পণ্ডিত মশায়ের মাথা ধরতে পারে। নিজে থেকে সে কোনো কথা বলতে আর সাহস করলে না। গঙ্গাচরণ নিজেই খানিকটা চিন্তার পর বললে-ফুলকুগুলিনী জাগরণ করতে হবে, বডড শক্ত কথা। পয়সা খরচ করতে হবে। পারবে ?