পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ९९> দেখবার জন্তে আশপাশ থেকে অনেক লোক জড় হয়েছিল। গ্রামের চাষীরা বললে—মণে জু টাকা । তাহলি আর ভাবনা ছেল না। কে বলেচে এ সব কথা ? আগেকার বক্তা নিতান্ত বাজে লোক নয়—ধান চালের চালানি কাজ করেচে, এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে বলে মনে হয়। সে জোর গলায় বললে—তোমরা কিছু বোঝে না হে— আমার মনে হচ্চে গতিক দেখে, চালের দর ঠিক বাড়বে। আমি এ কারবার অনেকদিন ধরে করে আসচি, আমি বুঝতে পারি। কথাটা কেউ গায়ে মাখলে না । তখন গা বন্ধ করার ব্যাপার নিয়ে সকলে গঙ্গাচরণকে সাহায্য করতে ব্যস্ত। হোম শেষ ক'রে পূজো আরম্ভ করতে গঙ্গাচরণ পুরো তিনটি ঘণ্টা কাটিয়ে দিলে। এসব অজ পাড়াগ, এখানকার হাল-চাল ভালই জানা আছে তার। পয়সা কি অমনি অমনি রোজকার হয় ? তিনটি মাটির কলসী সিঁদুর দিয়ে চিত্রিত করতে হয়েচে, তালপাতার তীর বানিয়ে চারকোণে পুতে পৈতের সুতো দিয়ে সেগুলো পরস্পর বাধতে হয়েচে, গাবকাঠের পুতুল তৈরি করতে হয়েচে গ্রাম্য ছুতোর দিয়ে, তেল সিঁদুর লেপে সেটাকে তেমাথা রাস্তায় পুততে হয়েচে–হাঙ্গামা কি কম ? সে যত বিদঘুটে ফরমাশ করে, গ্রামের লোকের তত শ্রদ্ধা বেড়ে যায় তার ওপরে । ওর কানে গেল লোকে বলাবলি করচে—বলি, এ কি তুই যা তা পেলি রে ? ওঁর পেটে এলেম কত ? যাকে বলে পণ্ডিত। এ কি তুই বাগান গার দীনু ভট চায পেয়েচিম ? গঙ্গাচরণ হেঁকে বললে—নিষ্কালি সরা দু’খানা আর শ্বেত অকন্দের ডাল দুটো— ঠিক দুপুরবেলা, এখন এ সব জিনিস কোথা থেকে যোগাড় হয়, আর কেই বা আনে। সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। একজন বিনিত ভাবে ল লে—আজ্ঞে, এ গায়ে তো কুমোর নেই, নিষ্কালি সরা এখন কোথায় পাই ? গঙ্গাচরণ রাগের মুরে বললে—ততে থাকলে পড়ে, ফাকি-জুকির কাজ আমায় দিয়ে হবে না । গা বন্ধ করতে নিষ্কালি সরা লাগে এ কথা কে না জানে ? আগে থেকে যোগাড় ক’রে রেখে দিতে পারো নি ? গ্রামের লোকে নিজেদের অজ্ঞতায় নিজেরাই লজ্জিত হয়ে উঠলো। বলাবলি করলে —এ খাটি লোক বাবা । এ কাছে কেন কাজের ফাকি নেই। যেভাবে হোক সরা এনে দিতেই হবে। নানা অপরিচিত অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বেলা দু’টোর সময়ে প্রক্রিয়া শেষ হোল । গঙ্গাচরণ বললে—সবাই এসে শান্তিজল নিয়ে যাও— খুব ঘটা ক'রে শাস্তিজল ছিটিয়ে দিয়ে গঙ্গাচরণ গম্ভীর মুখে বললে—এবার আসল কাজটি বাকি- 藏 উপস্থিত সকলে এ ওর মুখের দিকে চায়। সকাল থেকে ফাইফরমাসের চোটে প্রত্যেকে হিমশিম খেয়ে গিয়েচে, শাস্তিজল পৰ্য্যন্ত ছিটানো হয়ে গেল, তবুও এখনও আসল কাজটি