পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ૨૨૭ —হঁ্যা হ্যা—বলুন— —আমার কিছু দিয়ে যান আজ যা পেলেন— —কেন ? —আমি না খেয়ে মরচি। ঘরে এক দানা চাল নেই। চালের দাম হু হু ক'রে বাড়চে । ছিল সাড়ে চার, হোল ছটাকা। পাচ ছটি পুষ্ঠি নিয়ে এখন চালাই কি ক'রে বলুন ? আমি নিজে এই বুড়ো বয়ল রোজকার না করলে সংসার চলে না। অথচ বুড়ো হয়ে পড়েচি বলে এখন আর কেউ ডাকেও না, চোকি আর তেমন ভাল দেখি নে । গঙ্গাচরণ চুপ করে থেকে বললে—তাই তো—বড় মুশকিল দেখচি। আপনার বয়স কত ? --উনসত্তর যাচ্চে। মেয়েরা বড়, ছেলে বড হোলে ভাল ছিল। এ বুড়ে বয়সে রোজকার করার কেউ নেই আমি ছাড়া । —চালের দাম কত চডেচে ? —আরও নাকি চড়বে শুনচি। এখনই খেতে পাচ্চি নে—আরও বাড়লে কি কিনে খেতে পারবো! এই যুদ্ধর দকণ নাকি অমনটা হচ্ছে— গঙ্গাচরণ মাঝে-মিশালে শোনে বটে যুদ্ধের কথা । মাঝে মাঝে দু-একখান এরোপ্লেন মাথার ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে দেখেচে । তবে এ অজ চাষাগায়ে কেউ খবরের কাগজ নেয় না, শহরও সাত-আট মাইল দূরে । গঙ্গাচরণ নিজের ধান্দায় ব্যস্ত থাকে, ওসব চর্চা করবার সময়ও তার নেই। তবুও কথাটা তাকে ভাবিয়ে তুললে। সে বুডো ভট চাষকে বললে—যা চাল পেয়েছি, তা থেকে কিছু আপনি নিয়ে যান—আর কিছু ডাল আর গাওয়া ঘি— দীচু ভট চাষ বললে—না, গাওয়া খি আমার দরকার নেই। বলে ভাত জোটে না, গাওয়া ঘি! আচ্ছ, আমি এই কাপড়ের মুড়োতেই চাল ডাল বেঁধে নিই। আপনি আমার বঁাচালেন । ভগবান আপনার ভাল করুন। কথাটা ভাবতে ভাবতে গঙ্গাচরণ বাড়ী এসে পৌছল। অনঙ্গ-বেী জিনিসপত্র দেখে খুব খুশি। বললে—চাল এত কম কেন ? —এক বুড়ে বামুন ভট,চায্যিকে কিছু দিয়ে এসেচি পথে। —যাক গে, ভালই করেচ। দিলে তা৩ে কমে না, বরং বেড়ে যায়। —শুনচি নাকি চালের দাম বাড়বে, সবাই বলচে। — ছণ্টাকা থেকে আরও বাড়বে । বল কি গো ? —সবাই তো বলচে। যুদ্ধর দরুণ নাকি এমন হচ্ছে— —কার সঙ্গে যুদ্ধ, বেধেচে গো ? —সে সব তুমি বুঝতে পারবে না। আমাদের রাজার সঙ্গে জার্মানি আর জাপানের— সব জিনিস নাকি আক্রা হয়ে উঠবে। "