পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ’ਤ੍ਹਾਂ গঙ্গাচরণ ভাবলে, কামদেবপুর এতটা পথ—যাবে কি করে ? সন্দে তো হয়ে গেল। আরও বেশ কিছুক্ষণ কাটলো। গঙ্গাচরণ কিছু বুঝতে পারচে না । এখনও যার না কেন? শীতের বেলা, কোন কালে স্বৰ্য্য অস্তে গিয়েচে । হঠাৎ দুর্গ পণ্ডিত বললে—ই্য, ভালো কথা—এবেল আমি দুটো খাবো কিন্তু এখানে। —খাবেন ? তাহোলে বাড়ীর মধ্যে বলে আসি । অনঙ্গ-বেী রান্নাঘরে চাল ভাজছিল, স্বামীকে দেখে বললে—ওগো, তোমার সেই পণ্ডিত মশায়ের জন্তে দুটো চাল ভাজচি যে তেল মুন মেখে তোমরা দুজনেই খাওগে— শোনো, পণ্ডিত মশাই রাত্তিরে এখানে খাবেন। —তুমি বললে বুঝি ? —না, উনিই বলচেন। আমি কিছু বলি নি । —অন্ত কিছু নয়, কি দিয়ে ভাত দিই পাতে ? একটু দুধ যা ছিল, ওবেলা তুমি আর হাবু খেয়েচ। দুর্গ পণ্ডিতের কথাবাৰ্ত্তা শুনে গঙ্গাচরণের মনে হোল সে খুব ভয় পেয়েচে । এমন একটা অবস্থা আসবে সে কথনে কল্পনাও করতে পারে নি। ওর ভয়ের ছোয়াচ এসে গঙ্গাচরণের মনেও পৌছায়। বাইরে ঘোড়ানিম গাছটার তলায় অন্ধকার রাত্রে বসবার জন্তে হাবু একটা বীশের মাচা করেছিল। দুই পণ্ডিতে সেই মাচার ওপর একটি মাদুর বিছিয়ে দিব্যি ফুরফুরে ফাগুনে হাওয়ায় বসে তামাক ধরিয়ে কথাবাৰ্ত্ত বলছিল। হাবু এসে বললে-বাবা, নিয়ে এসো ওকে, খাওয়ার জায়গা হয়েচে— মুগের ডাল, আলুভাতে, পেঁপের ডালনা ও বড়াভাজ। অনঙ্গ-বেী রাধতে পারে খুব ভাল। দুর্গ পণ্ডিতের মনে হোল এমন সুস্বাদু অন্নব্যঞ্জন অনেক দিন খায় নি। হাবু বললে—ম জিজ্ঞেস করচে আপনাকে কি আর দুখানা বড়াভাজা দেবে ? গঙ্গাচরণও ওই সঙ্গে খেতে বসেচে। বললে—হঁ্যা হ্যা, নিয়ে আয় না ! জিজ্ঞেস করাকরি কি ? অনঙ্গ-বে। আড়ালে থেকে হাবুর হাতে পাঠিয়ে দিলে একটা রেকাবিতে কিছু পেপের ডালনা, ক’খানা বড়াভাজ । গঙ্গাচরণ বললে—ওগো, তুমি ওঁর সামনে বেরোও, উনি তোমার ধনপতি কাকার বয়েসী । আপনার বয়েস আমার চেয়ে বেশি হবে, কি বলেন ? দুর্গ পণ্ডিত বললে—অনেক বেশি। বৌমাকে আসতে বলুন না ? একটা কাচা ঝাল নিয়ে আসুন । একটু পরে অনঙ্গ-ৰেী লজ্জা-কুষ্ঠা-জড়িত মুঠাম স্বগের কাচের চুড়ি-পরা হাতে গোটা-দুই কাচ লঙ্ক এনে দুর্গ পণ্ডিতের পাতে ফেলে দিতেই দুর্গ পণ্ডিত ওর দিকে মুখ তুলে চেয়ে বললে—ম যে আমার লক্ষ্মী পিরতিয়ে। আমার এক ভাইঝির বরিসী বটে। কোনো লজ্জা নেই আমার সামনে বৌমা—একটু সর্ষের তেল আছে। দাও তো মা—