পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী হাৰু বললে—ম বলচে, দুধ নেই। একটু তেঁতুল গুড় মেখে ভাত ক'টা খাবেন ? —ই ই, খুব। দুধ কোথায় পাবো ? বাড়ীতেই কি রোজ দুধ খাই নাকি ? দুর্গ পণ্ডিত এই বয়সেও কিন্তু বেশ খেতে পারে। মোট আউশ চালের রাঙা রাঙা ভাত শুধু তেঁতুল গুড় মেখেই যা খেলে, গঙ্গাচরণের তা দু'বেলার আহার। অনঙ্গ-বে। কিন্তু খুব খুশি হোল ছৰ্গা পণ্ডিতের খাওয়া দেখে। যে মানুষ খেতে পারে, তাকে নাকি থাইরে মুখ । নিজের জন্তে রাখা বড়াভাজাগুলো সে সব দিয়ে দিলে অতিথির পাতে । গঙ্গাচরণ মনে মনে ভাবলে পৌনে সাত টাকায় বেচারী নিশ্চয়ই আধ পেট খেয়ে থাকে— রাত দশটার বেশী নয়। একটু ঠাণ্ড রাতটা। আবার এসে দুজনে বসলো নিমগাছের তলায় বাশের মাচায়। হাবু তামাক সেজে এনে দিলে। দুর্গ পণ্ডিত বললে—এখন কি করি আমার একটা পরামর্শ দাও তো ভায়া । যে রকম त्न-ि গঙ্গাচরণ চিন্তিত সুরে বললে—তাই তো ! আমারও তো কেমন কেমন মনে হচ্চে । কেরাসিন তেল বাজারে আর পাওয়া যাচ্ছে না, আবার কাল থেকে শুনচি দেশলাইও নাকি নেই। —সে মরুক গে, যাক কেরাসিন তেল। অন্ধকারে থাকবো । কিন্তু থাবো কি ? চাল নাকি মোটেই মিলবে না। দামও চড়বে। —দাম আরও চড়বে ? দশ টাকা হয়েচে, আরও ? —একজন ভালো লোক বলছিল সেদিন । এই বেলা কিছু কিনে রাখতি পারলে ভাল হোত, কিন্তু পৌনে সাত টাকা মাইনেতে রোজকার চাল কেনাই কঠিন হয়ে পড়েচে । আমাদের স্কুলের সেক্রেটারি হোল ওগায়ের রতিকান্ত ঘোষ। গোলাপালা আছে বাড়ীতে । ধানচাল মজুদ আছে। সেদিন বললাম আমার একমণ চাল দিন, মাইনে থেকে কেটে নেবেন । তা আধমণ দিতে রাজি হয়েচে । —আপনার কত চাল লাগে রোজ ? —তা সকাল বেল উঠলি একপালি করে চালির খরচ । খেতে দুবেলায় আট-নট প্রাণী । কি করে চালাই বলে! তো ভায়া ? ও আধমণ চালে আমার ক'দিন ? গঙ্গাচরণ মনে মনে বললে—তার ওপর খাওয়ার যা বহর। অমন যদি সকলের হয় বাড়ীতে, তবে রতিকান্ত ঘোষের বাবাও চলি যুগিয়ে পারবে না— দুর্গ পণ্ডিত কিছুতেই ঘুমুতে যার না। মাঝে পড়ে গঙ্গাচরণেরও ঘুম হয় না। অতিথিকে ফেলে রেখে সে একা শুতে যায় কি করে ? তার নিজেরও যে ভর একেবারে না হয়েচে তা নয় । দুর্গ পণ্ডিত বললে—একটা বিহিত পরামর্শ দাও তো ভায়া। ওখানে এক এক থাকি, যত সব অজ মুখুদের মধ্যিখানে। আমরা কি পারি? আমরা চাই একটু সৎসঙ্গ, বিস্তে পেটে আছে এমন লোকের সঙ্গ। নয়তো প্রাণ যে ছাপিয়ে ওঠে। না কি বল ?