পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত *Rరి) দোকানে ঘুরে সে দেখলে চালের বাজারে সাড়ে বারো টাকা। গত হাটবারেও ছিল দশ টাকা চার আনা, একটা হাটের মধ্যে মণে একেবারে ন’ সিকে চড়ে যাবে এ তে স্বপ্নের অগোচর। চাল কিনবে কি না-কিনবে ভাবচে, এমন সময় এই বিষম হৈচৈ । লোকের ভিড় ক্রমশঃ পাতলা হয়ে আসচে, সবাই উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটচে। কেউ চাল নিয়ে ছুটচে, কেউ শুধু হাতে। গঙ্গাচরণ বিমূঢ়ের মত দাড়িয়ে ভাবচে তখনও, চাল কিনবে কিনা —এমন সময় পেছন থেকে দু’জন লোক এসে ওর ঘাড়ের ওপর পড়লো, তার মধ্যে একজন ওকে জাপটে ধরলে জোর করে ওর চটের থলে সুদ্ধ। গঙ্গাচরণ চমকে উঠে বললে—কে ? কে ? কর্কশ কণ্ঠে কে একজন অস্পষ্ট দিবালোকে বলে উঠলো—চাল নিয়ে পালাচ্চে শালা— হাতে-নাতে ধরেচি! গঙ্গাচরণ বাকি মেরে উঠে বললে—কে চাল চুরি করেচে ? লোক চেনো না ? লোক দু'জন ওর সামনে এসে ভাল করে মুখ দেখলে! গঙ্গাচরণ চিনলে ওদের, বন্তেবেড়ের দফাদার সাধুচরণ মণ্ডল এবং ঐ ইউনিয়নের জনৈক চৌকিদার। ওরা কিন্তু গঙ্গাচরণকে চেনে না । চৌকিদার বললে—শালা, লোক সবাই ভালো। সকলকেই আমরা চিনি। চাল ফেললি ক’নে ? —আমার নাম গঙ্গাচরণ পণ্ডিত, নতুন গায়ে আমার পাঠশালা। চাল কিনতে এসেছিলাম বাপু, ব্রাহ্মণকে যা তা বোলে না। আমায় সবাই চেনে এ দিগরে। ছেড়ে Włg— সাধুচরণ দফাদার ওর সামনে এসে মুখ ভালো করে দেখে বললে—এ দেখচি পুরোনো দাগী চোর। এর নাম মনে পড়চে না, বাধো একে । ঠিক সেই সময় নতুন গায়ের তিন জন লোক এসে পড়াতে গঙ্গাচরণ দাগী চোর ও চুরির অভিযোগ থেকে নিস্তার পেলে । এমন হাঙ্গামে গঙ্গাচরণ কখনো পড়ে নি জীবনে । গঙ্গাচরণের ফিরতে রাত হয়ে গেল সে দিন। অনঙ্গ-বে বসে আছে চালের আশায়। এত রাত কখনো হয় না হাট করতে যেয়ে । ব্যাপার কি ? বিনোদ কপোলীর বোন ভাকু এসে বললে—কি করচো ঠাকরুণ দিদি ? —এসো ভান্থ। বসো ভাই— —দাদাঠাকুর কনে ? —রাধিকানগরে হাটে গিয়েচে, এখনো আসবার নামটি নেই। —আজি নাকি খুব হ্যাংনাম হয়ে গিয়েছে হাটে । দাদা ফিরে এয়েচে, তাই বলছেল। অনঙ্গ-বেী উদ্বিগ্ন মুখে বললে—কি হানামা রে ভাস্থ হয়েচে কি ? ভায় বললে—কি নাকি চালের দোকান লুঠ হয়েছে, অনেক লোককে পুলিলে ধরে