পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ বিভূতি-রচনাবলী নিয়ে গিয়েচে—এই সব। অনঙ্গ-বোঁ আশ্বস্ত হোল, তার স্বামী লুঠের ব্যাপারে কখনো থাকবে না, স্বতরাং পুলিসে ধরেও নিয়ে যায় নি, হয়তে ওই সব দেখতে দেরি করে ফেলেচে। তবুও সে হাবুকে ডেকে বললে-ও হেবে, একটু এগিয়ে দেখ না—হাট থেকে লোকজন ফিরে এলো। এত দেরি হচ্চে কেন ? এমন সময়ে শূন্ত চালের থলে হাতে গঙ্গাচরণ বাড়ী ঢুকে বললে—ও, কি বিপদেই আজ পড়ে গিয়েছিলাম। আমাকে কিনা ধরেচে চোর বলে । অনঙ্গ বলে উঠলো—সে কি গো ? —হ্য, ওই বন্তেবেড়ের সাধুচরণ দফাদার আর দু ব্যাটা চৌকিদার। —ও মা, তারপর ? —তারপর বাধে আর কি। শেষে এ গায়ের লোকজন গিয়ে না পডলে বেঁধে নিয়ে যেতে | 發 —কি সৰ্ব্বনাশ গা! মা সাত-ভেয়ে কালীর পূজো দেবো স পাচ আনা। মা রক্ষা করেচেন । —যাক, সে তো গেল এক বিপদ, ইদিকে যে তার চেয়েও বিপদ । চাল পেলাম না হাটে । —তুমি ভেবো না, আমি রাতটা চালিয়ে দেবো এক রকমে। কাল দুপুরেও চালাবো । সারাদিনে চাল যোগাড় করে আনতে পারবে এখন খুবই। বাইরে এসে তাড়াতাডি ভামুকে বললে—ভাতু, দিদি, আমায় এক পালি চাল ধার দিতে পারবে আজ রাতের মত ? উনি হাটে গিয়ে হ্যাংনামাতে পড়ে গিয়েছিলেন, চাল কিনতি পারেন নি । ভানু বললে—এখুনি পেঠিয়ে দিচ্চি ঠাকরুণ দিদি। —না দিলে কিন্তু রাতে ভাত হবে না । —ওমা, সে কি কথা ঠাকরুণ দিদি, নয়তো আমি নিজে নিয়ে আসচি । ভায় চলে গেল বটে কিন্তু চাল নিয়ে এলো না । এই আসে এই আসে করে প্রায় ঘণ্টাখানেক কেটে গেল, তখনও ভানুর দেখা নেই। অনঙ্গ-বেী আশ্চৰ্য্য হয়ে গেল, ব্যাপারটা কি ? এই গ্রামে এসে পৰ্য্যস্ত যার কাছে যা মুখ ফুটে চেয়েচে সে তখুনি পরম খুশির সঙ্গে সে জিনিসটা এনে দিয়ে যেন কৃতাৰ্থ হয়ে গিয়েচে । এই প্রথম বার অনঙ্গ-বেীকে সামান্ত এক কাঠা চাল ধার চেয়ে বিফল হোতে হোল । এদিকে বিপদের ওপর বিপদ, স্বামী হাট থেকে এসে কোথায় যেন বেরিয়ে গেলেন, বোধ হয় হাটের গল্প বলবার জন্তে বিশ্বাস মশায়ের বাজী, কি করেই বা তাকে সে জানায় ? এসে খিদের ওপর ভাত খেতে পাবে না। সাতপাচ ভাবচে, এমন সময় ভায় উঠোন থেকে ডাকলে—ও ঠাকরুণ দিদি ?