পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত । ২৩৩ অনঙ্গ-বেয়ের প্রাণ এল ফিরে। সে তাড়াতাড়ি বাইরে এসে বললে—বলি কি কাওখান হ্যা রে ভাকু ? ভানু দাওয়ায় উঠে এসে শুকনো মুখে বললে—ও ঠাকরুশ দিদি, আমি সেই থেকে চাল যোগাড় করবার জন্তে তিন-চার বাড়ী ঘুরে বেড়িয়েচি — —কেন, তোদের বাড়ী কি হোল ? —নেই। হাটে পায় নি আজ। —হাটে কেন ? ক্ষেতের ধান ? —আ মোর কপাল! ক্ষেতের ধান আর কনে! ছটাকা মণ যেমন হোল, অমনি কণকা সব ধান আড়তে নিয়ে গেল গাড়ীপুরে। বিক্রি করে নগদ টাকা ঘরে এনলে। ফি-জনে জুতো কেনলে, কাপড় কেনলে, কাকীমা ঘটি বাসন কেনলে, মাছ খালে, সন্দেশ খালে, মাংস খালে। নবাবী করে সে টাকাও উড়িয়ে ফেললে। এখন সে ধানও নেই, সে টাকাও নেই। ক’হাট কিনে খাতি হচ্ছে মোদেরও। —অন্ত বাড়ী যে ঘুরলি বললি ? —মোদের পাড়ায় কারে ঘরে ধান নেই ঠাকরুণ দিদি। সব কিনে খাওয়ার ওপর ভরসা । ভানু আঁচলের গেরো খুলতে খুলতে বললে । —ওতে কি রে ? —এক খুঁটি মোট চাল ওই ক্ষুদে গয়লার নাত-বোঁয়ের কাছ থেকে চেয়ে-চিত্তে— —হঁ্যা রে, তারা তো বড্ড গরীব। তুই আনলি, তাদের খাবার আছে তো ? দাড়া— —সে আমি না জেনে ২,নি নি দিদি ঠাকরুণ। ওরা লোকের ধান ভানে কিনা ? অাট কাঠা ধানে এক কাঠা ধান বানি পায় । বানির ধান ভেনে খোরাকি চালায় । অনঙ্গ-বে একটু ভেবে বললে—আমার একটা উপকার করবি ভাস্থ ? —কি ? —আচ্ছা সে পরে বলবো এখন। দে চাল কটা— —এক খুটি চালি রাতটা হবে এখন তো ? অার না হলিই বা কি করব ঠাকরুশ দিদি ? কত কষ্ট্রে যে চাল ক’ড যোগাড় ক’রে এনিচি তা আমিই জানি । গঙ্গাচরণ ভাত খেতে বসলো অনেক রাতে। ডাল, ভাত আর পুঁই শাকের চচ্চড়ি। বাড়ীর উঠোনেই মুগৃহিণী অনঙ্গ-বেী পুঁই মাচা তুলে দিয়েছে, লাউ মাচা তুলেছে, কিছু টেড়স, কিছু নটে শাকের ক্ষেত করেছে। হাবু ও নিজে দুজনে মিলে জল দিয়েছে আগে আগে, তবে এই সব গাছ বেঁচে আজ তরকারি যোগাচ্ছে । অনঙ্গ-বে বললে—আর দুটো ভাত মেখে নাও, ভাল দিয়ে পেট ভরে খাও— —এ চাল দুটাে ছিল বুৰি আগের দরুণ ? -ह ।