পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২৩৫ এমন সময় দেখা গেল আকাইপুরের মাঠের পথ বেয়ে তিন-চারটি স্ত্রীলোক চালের ধাম, কেউ বা বস্ত মাথায় বড় রাস্তায় এসে উঠলো। সবাই এগিয়ে চললে অমনি । - মুহূৰ্ত্ত মধ্যে উপস্থিত পাঁচ-ছ জনের মধ্যে একটা হুড়োছড়ি কড়াকড়ি পড়ে গেল, কে কতটা চালকিনতে পারে ! হঠাৎ ওদের মধ্যে কার যেন মনে পড়লো কথাটা, সে জিগ্যেস করলে—কত করে পালি ? একজন চালওয়ালী বললে—পচি সিকে । গঙ্গাচরণ এবং উপস্থিত সকলেই আশ্চৰ্য্য হয়ে গেল, পাচ সিকে পালি, অর্থাৎ কুড়ি টাকা মণ । নবীন পাড় ইয়ের মুখ শুকিয়ে গেল, সে একটা টাকা এনেচে–পাচ সিকে না হোলে এক কাঠা চাল কেউ বিক্রি করবে না। এক টাকার চাল কেউ দেবে না । এরা সকলেই আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলেও দেখলে যে চাল যদি সংগ্রহ করতে হয় তবে এই বেলা । বিলম্বে হতাশ হতে হবে। আরও পাচ ছ জন ক্রেতাকে দুরে আসতে দেখা যাচ্চে । দু'জন লোক এদের মধ্যে নিরুপায়। ওদের হাতে বেশি পয়সা নেই। সুতরাং চাল কিনবার আশা ওদের ছাড়তে হোল। এই দলে নবীন পাড়ই পড়ে গেল। গঙ্গাচরণ বললে—নবীন, চাল নেবে না ? —না বাবাঠাকুর, একটা সিকি কম পড়ে গেল । —তবে তো মুশকিল । আমার কাছেও নেই যে তোমাকে দেবো । —আধসের পুটি মাছ ধরেলাম সামটার বিলে। পেয়েলাম ছ' আন । আর কাল মাছ বেচবার দরুণ ছেল দশ আনা। কুড়িয়ে-বুড়িয়ে একটা টাকা এনেলাম চাল কিনতি । তা আবার চালের দাম চড়ে গেল কি করে জানবো ? —তাই তো ! —আধপেটা খেয়ে আছি দু'দিন। চাষীদের ঘরে ভাত আছে, আমাদের তা নেই। আমাদের কষ্ট সকলের অপিক্ষে বেশি। জলের প্রাণী তার ওপর তো জোর নেই ? ধরা না দিলে কি করচি। যেদিন পালাম সেদিন চাল আনলাম, যে দিন পালাম না, সেদিন উপোস। আগে ধান চাল ধার দিতে, জিকাল কেউ কিছু দেয় না । গঙ্গাচরণ কাঠাদুই চাল সংগ্রহ করেছিল কাড়াকড়ি করে। তার ইচ্ছে হোল একবার এই চল থেকে নবীন পাড় ইকে সে কিছু দেয়। কিন্তু তা কি করে দেওয়া যায়, চালের অভাবে হয়তো উপোস করে থাকতে হবে কালই। গ্রামে ধান চাল মেলে না যে তা নয়, " মেলে অতি কষ্টে । ধান চাল থাকলেও লোকে স্বীকার করতে চায় না সহজে। নবীন পাড়ুইকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গাচরণ রাধিকানগরের বাজারে এল। এক টাকার চালই কিনে দেবে তাকৃে। দোকান ছাড়া তো হবে না। কিন্তু মুশকিলের ব্যাপার, বড় বড় তিন চারটি দোকান খুঁজে বেড়ালে, সকলেরই এক বুলি চাল নেই।