পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২৩৯ মুখের ভাত অপরকে ধরে দিতে ও চিরকাল অভ্যস্ত। অথচ মুখ ফুটে বলবে না কখনো কি খেয়েচে না খেয়েচে । এমন স্ত্রী নিয়ে সংসার করা বড় মুশকিলের কাও। কত কষ্টে গত হাটে চাল যোগাড় করেছিল সেই জানে। ইতিমধ্যে দীচু ভট চাষ ঘুম ভেঙে উঠে বসলো। বললে—এই যে পণ্ডিত মশাই! গঙ্গাচরণ দু'হাত জুড়ে নমস্কার করে বললে—নমস্কার। ভাল ? দীচু হেসে বললে—ম-লক্ষ্মীর হাতে অন্ন খেয়ে আপাতোক খুবই ভালো। বড় জমিয়ে নিয়েচি । মা সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ! গঙ্গাচরণ মনে মনে বললে—ওর মাথাটি খেলে কেউ লক্ষ্মী, কেউ অন্নপূর্ণ বলে। আমি এখন মাঝে পড়ে মারা যাই । মুখে বললে—হে হেঁ তা বেশ–তা আর কি— —কোথা থেকে ফিরলেন ? —পাঠশালা থেকে । —আমি একটু বিপদে পড়ে পরামর্শ করতে এলাম পণ্ডিত মশায়। —কি বলুন ? —বলবো কি, বলতি লজ্জা হয়। চাল অভাবে সপুরী উপোস করতে হচ্চে। কম দুঃখে পড়ে আপনার কাছে আসি নি । —কামদেবপুরে মিলচে না ? -আমাদের ওদিকি কোনো গায়ে না । আর যদিও থাকে তো দেড় টাকা করে কাঠা বলচে। এ কি হোল দেশে ? আমার বাড়ী চার-পাচ জন পুষ্ঠি । দেড় টাকা চালের কাঠ কিনে খাওয়াতি পারি অামি ? —এদিকেও তো ওই রকম ভট চাষ মশায়। আমাদের গায়েও তাই। —বলেন কি ? -ঠিক তাই। ও হাটে অতি কষ্টে দু' কাঠা চাল কিনে এনেছিলাম। ? taيه - —ধান কেউ বিক্রি করচে না । করলেও ন’টাকা সাড়ে ন’টাক মৰ্ণ । —এর উপায় কি হবে পণ্ডিত মশায় ? আপনি বসুন, সেই পরামর্শ করতি তো আমার আসা । সত্যি কথা বলতি কি আপনার কাছে, কাল রাতি আমার খাওয়া হয় নি ? চাল ছিল না ঘরে। মা-লক্ষ্মীর কাছে অন্ন খেয়ে বাচলাম। বুড়ে বয়সে খিদের কষ্ট সহি করতে পারিনে আর । —কি বলি বলুন, শুনে বড্ড কষ্ট হোল। করবারও তো নেই কিছু। আমাদের গ্রামের অবস্থাও তথৈবচ। দীচু ভট চাষ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে—বুড়ে বয়সে এবারড না, খেয়ে মরতি হবে দেখচি !