পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8e বিভূতি-রচনাবলী গঙ্গাচরণ বললে—তাই তো পণ্ডিত মশাই, কি যে করি, বুঝতে তো কিছু পারিনে। তা ছাড়া আপনাদের গারের ব্যবস্থা এখান থেকে কি করে করা যাবে। কতটা চাল চান ? চলুন দিকি একবার বিশ্বেস মশায়ের বাড়ী ? কিন্তু বিশ্বাস মশায়ের বাড়ী যাওয়া হবে কি, দীক্ষ ভটচাষ মান মুখে বললে—তাই তো, পয়লাকড়ি তো আনি নি। গঙ্গাচরণ একটু বিরক্তির মুরে বললে—আনেন নি, তবে আর কি হবে ? কি করতে পারি অামি ? গঙ্গাচরণ বোধ হয় একটু কড়া মুরে বলে ফেলেছিল কথাটা । দীচু ভট চায হতাশভাবে বললে—তাই তো, এবারডা দেখচি সত্যিই না খেয়ে মরতি হবে । গঙ্গাচরণ ভাবলে—ভাল মুশকিল! তুমি না খেয়ে মরবে তা আমি কি করবো? আমার কি দোষ ? এই সময় অনঙ্গ-বোঁ দোরের আড়াল থেকে হাতনাড়া দিয়ে গঙ্গাচরণকে ডাকলে । গঙ্গাচরণ ঘরের মধ্যে গিয়ে বললে—কি বলচ ? —জিজ্ঞেস করে উনি কি এখন দুখানা পাকা কঁকুড খাবেন ? ঘরে আর তো কিছু নেই। —থাকে তো দাও না। জিজ্ঞেস করতে হবে না। ফুটি র্কাকুড় কি দিয়ে দেবে ? গুড় বা চিনি কিছুই তো নেই। —সে ব্যবস্থার জন্তে তোমার ভাবতে হবে না । সে আমি দেখচি । আর একটা কথা শোনো। উনি অমন দুঃখু করচেন বুডো বয়েসে না খেয়ে মরবেন বলে, তোমাকে একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। আমাদের বাড়ী এয়েচেন কেন, একটা হিল্পে হবে বলেই তো । আমি দুটাে কাচ্চী-বাচ্চ নিয়ে ঘর করি। বুডো বামুন আমাদের বাড়ী থেকে শুধু হাতে শুধু মুখে ফিরে গেলে অকল্যাণ হবে না ! তা ছাড়া যখন আমাদের আশা করে এতটা পথ উনি এরেচেন, এর একটা উপায় না করলে হয় ? গঙ্গাচরণ বিরক্ত মুখে বললে—কি উপায় হবে ? খালি হাতে এসেচে বুডো ও বড় ধড়িবাজ। একদিন অমনি কামদেবপুর থেকে ফিরবার পথে চালগুলো নিয়ে নিলে— অনঙ্গ-বেী জিভ কেটে বললে—ছিঃ ছিঃ—অতিথি নারায়ণ । আমার বাড়ী উনি এরেচেন, আমাদের কত ভাগ্যি। ও কথাটি বোলো না। অতিথিকে অমন কথা বলতে আছে ? কাকে কি যে বলে। ! নিয়েচেন চাল, নিয়েচেন। আমাদের বাপের বরিসী মানুষ। ওঁকে অমন বোলো না— —ত তো বুঝলাম, বলবো না। কিন্তু পয়সা না থাকলে চাল ধান পাবো কোথায় ? —উনি কি বলেন দ্যাথো— —উনি যা বলবেন বোঝাই গিয়েচে। উনি এরেচেন ভিক্ষে করতে, সোজা কথা ।