পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8૭ বিভূতি-রচনাবলী করে থাকেন। আমাদের বুকির মধ্যি হু-হু করতি থাকে উনি না এলি— অনঙ্গ-বেী হেসে বললে—তোমাদের যে বড় দরদ দেখছি— ছোট-বেী বললে—আমিও তা বলছিলাম, বামুন-বেয়ের রাঙা পায়ের তলায় পড়ে আমি মরতি পারি— বড়-বেী বললে—সে তো ভাগ্যি—বামুনের এরিস্ত্রী বৌয়ের পারে মরবার ভাগ্যি চাইরে ছুটকি। সে এমনি হয় না। এদের দুপুরের মজলিশ জমে উঠলো । কাপালীপাডার বেী-ঝিয়েদের এই একমাত্র আমোদ-আহলাদের স্থান। এখানে না এলে ওদের দুপুরটা মিথ্যে হয়ে যায় যেন। পাড়াগায়ের গৃহস্থঘরের মেয়ে, দুপুরে এদের দিবানিদ্রার অভ্যেস নেই, সময়ও পায় না। ধান ভানা চিন্ডে কোটাতেই অবসর সময় কেটে যায়, ওর মধ্যেই এদের আডডা, গল্পগুজব যা কিছু। অনঙ্গ-বেী বললে—বড়-বেী, ও ধান কাদের ? —কাল উনি কোথেকে কত কষ্টে পাচ কাঠা ধান এনেলেন–কিন্তু শুনচি ধান নাকি সব গবরমেণ্টে নিয়ে যাচ্চে ? —কে বললে ? —উনি কাল হাট থেকে নাকি শুনে এয়েচেন । ছোট-বেী বললে—ওসব কথা এখন রাখো দিদি। বামুন-বেীরের জন্তে একটা পান সেজে নিয়ে এসো দিকি । —পান আছে, সুপুরি নেই যে ? কাল হাটে একটা সুপরির দাম দু’পয়সা । সিদ্ধেশ্বর কামারের বেী বললে-হ্যা দিদি, নাকি আজকাল খেজুরের বীচি দিয়ে পান সাজা হচ্চে সুপুরির বদলে ? অনঙ্গ-বেী বললে—সত্যি ? কামার-বেী বললে—সত্যি মিথ্যে জানিনে ঠাকরুণ-দিদি। মিথ্যে কথা বলে শেষকালে বামুনের কাছে, নরকে পচে মরবো ? কানে যা শুনিচি–বললাম। কথা শেষে সে হাতের এক রকম সুন্দর ভঙ্গি করে মৃদু হাসলে । এই টেকিশালের মজলিশে অনঙ্গ-বেয়ের পরে দেখতে ভালো হরি কীপালীর ছোট-বোঁ, তার পরেই এই কামার-বে। এর বয়েস আরও কম ছোট-বোঁয়ের চেয়ে, রংও আর একটু ফসর্ণ—তবে ছোট-বেয়ের মুখশ্ৰী এর চেয়ে ভালো। কামার-বেী সম্বন্ধে গ্রামে একটু বদনাম আছে, সে অনেক ছেলে-ছোকরার মুণ্ডু ঘুরিয়ে দেবার জন্তে দারী, অনেককে প্রশয়ও দেয়। কিন্তু ছোট-বেী সম্বন্ধে সে কথা কেউ বলতে পারে না। অনঙ্গ-বেী বললে- পোড়া কপাল পান খাওয়ার। খেজুরের বীচি দিয়ে পান খেতে যাচ্চি নে। ক্ষিত্তী কাপালী শুনে হেসে খুন হয় আর কি। সে বিনোদ মোড়লের বিধবা বোন, ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়েস, আধফসর্ণ থান পরে এসেচে, দেখতে শুনতে নিতান্ত ভালও নয়,