পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર8ઝ বিভূতি-রচনাবলী ছোট-বোঁ হঠাৎ বড় নরম হয়ে গিয়েছিল। সে বললে—নাও নাও বামুন-বেী, তোমার আদিখ্যেতা দেখে আর বাচিনে । বড-বে ছোট-বেীরের দিকে আডচোখে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে মুখ চোখ ঘুরিয়ে হাত নেড়ে অদ্ভূত ভঙ্গিতে বললে—আহা-হা । বলি কত ঢং দেখালি লা। ক্ষিত্তী কাপালী বড-বেয়ের চোখ মুখ ঘোরানোর ভঙ্গি দেখে পুনরায় হেসে গড়িয়ে প্রায় টেকির গডের উপর উপুড় হয়ে পড়লো। মুখে অসংলগ্ন ভাবে যা বলতে লাগলে তা অনেকটা এই রকম-ওমা পোডানি-বড-বেী—হি হি—কি কাণ্ড—হি হি—বলে কিনা—ও বামুনদিদি–হি ছি—আমি আর বাচবো না-ওমা—হি হি—ইত্যাদি। কামার-বে বললে—ত নাও, তুমি আবার যে এক কাও বাধালে। গড়ে কপাল ছেচে না যায় দেখো ! শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি অবস্থা দেখে অনঙ্গ-বেী যে এত আশাবাদী, সে পৰ্য্যস্ত ভয় খেয়ে গেল। ধান চাল হঠাৎ যেন কপূরের মত দেশ থেকে উবে গেল কোথায় । এক দানা চাল কোথাও পাওয়া যায় না। অত বড গোবিন্দপুবেব হাটে চাল আসে না আজকাল। খালি ধামা কাঠা হাতে দলে দলে লোক ফিরে ফিরে যাচ্চে চাল আভাবে । হাহাকার পড়ে গিয়েচে হাটে হাটে। কুণ্ডুদের দোকানে যে এত চাল ছিল, বস্ত সাজানো থাকতো বালির বস্তার দেওয়ালের মত, সে গুদাম আজকাল শূন্তগর্ভ। পথেঘাটে ক্রমশ: ভিখিরীর ভিড বেডে যাচ্চে দিন দিন, এরা এতদিন ছিল কোথায় সকলেই ভাবে, অথচ কেউ জানে না । এ দেশের লোকও নয় এরা, বিদেশী ভিখিরী, একদিন অনঙ্গ-বেী বান্নাঘরে রান্না করচে, হঠাৎ পাচ-ছাট অৰ্দ্ধ উলঙ্গ জীৰ্ণশীর্ণ স্ত্রীলোক, সঙ্গে তাদের সম্পূর্ণ উলঙ্গ বালক-বালিকা—ঘরের দাওয়ার ধারে দাড়িয়ে বলতে লাগলো—ফ্যান খাইতাম—ফ্যান খাইতাম— অনঙ্গ প্রথমটা ওদের উচ্চারণের বিকৃতিব দরুন কথাটা কি বলা হচ্চে বুঝতে পারলে না। তা ছাড ‘খাইতাম’ এটা ক্রিয়াপদের অতীত কালের রূপ এসব দেশে, তা বৰ্ত্তমানে প্রয়োগ করার সার্থকতা কি, এটা বুঝতেও একটুও দেরি হোল। পরে বুঝলে যখন তখন বললে—একটু দাড়াও—ফ্যান দেবো। ওরা ইডি, তোবড়ানো টিনের কোঁটে পেতে ফ্যান নিয়ে যখন চলে গেল, তখন অনঙ্গ-বেী কতক্ষণ ওদের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। এমন অবস্থা দাডিয়েচে নাকি যে দেশ ছেডে এদের বিদেশে আসতে হয়েচে ছেলেমেয়ের হাত ধরে এক মগ, ফ্যান ভিক্ষে করতে ? অনঙ্গবেীরের চোখে জল এল। নিজের ছেলেরা পাঠশালায় গিয়েচে, ওদের কথা মনে পড়লে । এতগুলো লোককে ভাত দেওয়ার উপযুক্ত চাল নেই ঘরে, নইলে দিত না হয় ওদের ছুটে দুটাে ভাত । ক্রমে নানাস্থান থেকে ভীতিজনক সংবাদ আসতে লাগলে সব। অমুক গ্রামে চাল একদম পাওয়া যাচ্চে না, লোকে না খেয়ে আছে। অমুক গ্রামের অমুক লোক আজ পাচদিন