পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সং ૨8જે ভাত খায় নি—ইত্যাদি। তবুও সবাই ভাবতে লাগলো, মানুষে কি সত্যি সত্যি না খেয়ে মরে ? কখনই নয় । তাদের নিজেদের কোনো বিপদ নেই। একদিন অনঙ্গ-বে। খুব ভোরে ঘাটে গিয়ে দেখলে জেলেপাডার রয়ে জেলের বেী ঘাটের ধারের কচুর ভাটা তুলে এক বোঝা করেচে। অনঙ্গ হেসে বললে—কি গা রয়ের বেী, আজ বুঝি কচুর শাক খাবে ? জেলে-বোঁ যেন ধরা পড়ে একটু চমকে গেল। যেন সে আশা করে নি এত ভোরে কেউ নদীর ঘাটে আসবে। লুকিয়ে লুকিয়ে এ কাজ করছিল সে, এমন একটা ভাব প্রকাশ পেলে ওর ধরনধারণে । সে মৃদ্ধ হেসে বললে—হঁ্যা, মা । —তা এত ? এ যেন দু'তিন বেলার শাক হবে । —সবাই খাবে মা, তাই । বলেই কেমন এক অদ্ভুত ধরনে ওর মুখের দিকে চেয়ে জেলে-বোঁ ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললে । অনঙ্গ-বেী অবাক হয়ে বললে—ওকি রয়ের-বেী, কঁদিচিস্ কেন ? কি হোল ? রয়ের-বেী আঁচলে চোখের জল মুছে আস্তে আস্তে বলে—কচ্চি কি সাধে মা ? এই ভরসা । —কি ভরসা ? –এই কচুর শাক মা। তিন দিন আজ করে পেটে লক্ষ্মীর দান৷ সেধোয় নি। —বলিস কি রয়ের-বে? না খেয়ে— —নিনক্যি, মা নিনস্ক্র্যি—তোমার কাছে মিছে কথা বলবো না সকালবেলা । কার দোরে যাবো, কে দেবে মোরে এই যুজ্যের বাজারে। যুজ্যের আক্রা ভাত কণর কাছে গিয়ে চাইবো মা ? তাই বলি এখনো কেউ ওঠে নি, গাঙের ধারে বড় বড় কচুর ভাট হয়েচে তুলে আনি গে। তাই কি তেল মুন আছে মা ? শুধু সেদ্ধ। অন্নকষ্টের এ মূৰ্ত্তিই কখনো দেখে নি অনঙ্গ । সে ভাবলে—আহা, আমার ঘরে যদি চাল থাকতো । আজ রয়ের-বে। আর তার ছেলেমেয়েকে কি না খাইরে থাকি ? জেলে-বে আপন মনে বলতে লাগলো—এক সের দেড় সের মাছ ধরে। পয়সা বড় জোর দশ আনা বারে আনা হয়। এক কাঠা চাল কিনতি একটা টাকা যায়—তাও মিলচে না হাটে বাজারে । মোরা গরীব নোক, কি করে চালাই বলে মা— অনঙ্গ-বেী আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে বাড়ী গেল। গঙ্গাচরণ ঘুম থেকে উঠে তামাক. খেতে বসেচে। স্বামীকে বললে—হঁ্যাগ, এ কি রকম বাজার পড়লে চালের ? ভাত বিনে কি সব উপোস দিতে হবে ? আমাদের ঘরেও তো চাল বাড়ন্ত । আজকাল চালের ধান আর কেউ দেয় না। গা থেকে ধনি গেল কোথায় ?

  • গঙ্গাচরণ হেলে বললে—তামার পয়সা যেখানে গিয়েচে ।