পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శి(te বিভূতি-রচনাবলী অনঙ্গ-বেী রেগে বললে—স্তাখো ওসব রঙ্গরস ভাল লাগে না । একটা হিল্পে করোছেলেপুলে উপোস করে থাকবে শেষে ? গঙ্গাচরণ চিন্তিত মুখে বললে—তাই ভাবচি ! আমি কি চুপ করে বসে আছি গা ? কি হবে এ ভাবনা আমারও হয়েচে । —চারিধারের ব্যাপার দেখে হাত-পা পেটের ভেতর ঢুকে যাচ্চে যে—আর বসে থেকে না । উপায় দ্যাথো । তিন দিনের মত চাল ঘরে আছে মজুত— —আর ধান কতটা আছে ? —সে ভান্‌লে বড় জোর পাচ কাঠা চাল হবে। তাতে ধরে আরো দশদিন। তার পরে ? —আমিও তাই ভাবচি । —যা হয় উপায় করে । দিন দুই পরে গঙ্গাচরণ পাঠশালা বন্ধ রেখে নরহরিপুরের হাটে গেল চালের সন্ধানে। বিষ্টপুর, ভাতছালা, মুবর্ণপুর, খডদীঘি প্রভৃতি গ্রাম থেকে ধানচাল জড়ো হয়ে আগে আগে নরহরিপুরের প্রসিদ্ধ চালের ও ধানের হাট বোঝাই হয়ে যেতো—সেই হাটের অত বড় চালাঘর খালি পড়ে আছে—এক কোণে বসে শুধু এক বুড়ী সামান্ত কিছু চাল বিক্রি করচে। গঙ্গাচরণ কাছে গিয়ে বললে—কি ধানের চাল ? —কেলে ধান ঠাকুর মশায় । নেবেন? খুব ভালো চাল কেলে ধানের । কথায় বলে— ধানের মধ্যি কেলে, মানুষের মধ্যি ছেলে— বুড়ীর কবিত্বের দিকে তত মনোযোগ না দিয়ে গঙ্গাচরণ ওর ধামা থেকে চাল তুলে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো। যেমন মোটা, তেমনি গুমো। মানুষের অর্থাদ্য। তবুও চাল বটে, খেয়ে মানুষে প্রাণ বাচতে পারে । —কতটা আছে ? —সবটা নেবা তুমি ? তিনকাঠা আছে। —দেড় টাকা করে কাঠা । গঙ্গাচরণ চমকে উঠলো, ভাবলে কথাটা সে শুনতে পায় নি। আবার জিজ্ঞেস করার পরেও যখন বুড়ী বললে এক কাঠার দাম দেড় টাকা, তখন গঙ্গাচরণের কপালে ঘাম দেখা দিয়েচে । দেড় টাকায় আড়াই সের, তা হোলে পড়লো চব্বিশ টাকা মৰ্ণ । কি সৰ্ব্বনাশ ! অনঙ্গ-বেী এত দিন পরের বাড়ীর ধান ভেনে চালিয়ে আসছিল বলে সে অনেকদিন হাটে বাজারের চালের দর জানে না। চাল এত চড়ে গিয়েচে তা তো তার জানা ছিল না। চারিদিক অন্ধকার দেখলে গঙ্গাচরণ। এত বড় নরহরিপুরের হাট—ধান চাল শূন্ত। মানুষ এবার কি সত্যিই তবে না খেয়ে মরবে ? কিসের কুলক্ষণ এসব ? পরশুও তা চালের দাম