পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छांद्गsाक XX হয়ত, কিন্তু কেন হয় নাই—সেও যেন পরম আত্মীয় বলিয়া মনে হইল—তাহাকে আজ কতদিন দেখি নাই ! কাছারিতে ফিরিয়া নিজের ঘরে ঢুকিয় টেবিলে আলো জালিয়া একখানা বই লইয় বসিয়াছি, সিপাহী মুনেশ্বর সিং আসিয়া সেলাম করিয়া দাড়াইল। বলিলাম—কি মুনেশ্বর ? ইতিমধ্যে দেহাতি হিন্দী কিছু কিছু বলিতে শিখিয়াছিলাম। মুনেশ্বর বলিল—হুজুর, আমায় একখানা লোহার কড়া কিনে দেবার হুকুম যদি দেন মুহুরী বাবুকে । —কি হবে লোহার কড়া ? মুনেশ্বরের মুখ প্রাপ্তির আশায় উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। সে বিনীত মুরে বলিল—একখানা লোহার কড়া থাকলে কত সুবিধে হুজুর। যেখানে সেখানে সঙ্গে নিয়ে গেলাম, ভাত রাধা যায়, জিনিসপত্র রাখা যায়, ওতে করে ভাত খাওয়া যায়, ভাঙবে না। আমার একখানাও কড়া নেই। কতদিন থেকে ভাবছি একখানা কড়ার কথা—কিন্তু হুজুর, বড় গরীব, একখানা কড়ার দাম ছ-আনা, অত দাম দিয়ে কড়া কিনি কেমন করে ? তাই হজুরের কাছে আসা, অনেক দিনের সাধ একখানা কড়া আমার হয়, হুজুর যদি মঞ্জুব করেন, হুজুর মালিক । একথান লোহার কড়াই যে এত গুণের, তাহার জন্য যে এথানে লোক রাত্রে স্বপ্ন দেখে, এ ধরণের কথা এই আমি প্রথম শুনিলাম। এত গরীব লোক পৃথিবীতে আছে যে ছ আনা দামের একখানা লোহার কড়াই জুটিলে স্বৰ্গ হতে পায় ? শুনিয়াছিলাম এদেশের লোক বড় গরীব। এত গরীব তাহ জানিতাম না। বড় মায়া হইল । পরদিন আমার সই করা চিরকুটের জোরে মুনেশ্বর সিং নউগচ্ছিয়ার বাজার হইতে একখানা পাচ নম্বরের কড়াই কিনিয়া আনিয়া আমার ঘরের মেজেতে নামাইয়া আমার সেলাম দিয়া দাড়াইল । —হে গৈল, হুজুরকী কৃপা-সে—কড়াইয়া হে গৈল ! তাহার হর্ষোৎফুল্ল মুখের দিকে চাহিয়া আমার এই একমাসের মধ্যে সৰ্ব্বপ্রথম আজ মনে হইল—বেশ লোকগুলা। বড় কই তো এদের ! দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ S ’ কিছুতেই কিন্তু এখানকার এই জীবনের সঙ্গে নিজেকে আমি খাপ খাওয়াইতে পারিতেছি না। বাংলা দেশ হইতে সন্ত আসিয়াছি, চিরকাল কলিকাতায় কাটাইয়াছি, এই অরণ্যভূমির নির্জনতা যেন পাথরের মত বুকে চাপিয়া আছে বলিয়া মনে হয় । এক-একদিন বৈকালে বেড়াইতে বাহির হইয়া অনেক দূর পর্যন্ত যাই। কাছারির কাছে তবুও লোকজনের গলা শুনিতে পাওয়া যায়, রশি দুই-তিন গেলেই কাছারি-ঘরগুলা