পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢b' বিভূতি-রচনাবলী শ্রাবণ মাসের শেষ । বেডায় বেড়ায় তিৎপল্লার ফুল ফুটেচে। কোচ বকের লম্বা সারি নদীর ওপর দিয়ে উড়ে যায় এপার থেকে ওপারের দিকে । অনঙ্গ-বেী নদীর ঘাটে জল তুলেতে গিয়েচে । ভূষণ ঘোষের বেী এক জায়গায় হাবড় কাদার ওপর ঝুকে পড়ে কি করচে। অনঙ্গ-বেীকে দেখে সে যেন একটু সঙ্কুচিত হয়ে গেল। যেন এ অবস্থায় কারো সঙ্গে না দেখা হওয়াই ভালো ছিল, ভাবটা এমন । অনঙ্গ-বেী কৌতুহলের সঙ্গে বললে—কি হচ্ছে গো গয়লী-দিদি ? ভূষণ ঘোষের বৌয়ের বয়স বেশী নয়, অনঙ্গ-বেয়ের সমবয়সী কিংবা দু-এক বছরের বড় হতেও পারে। আঁচলে কি একটা ঢেকে সলজ্জভাবে বললে—কিছু না ভাই— —কিছু না তবে ওখানে কি হচ্চে তোমার মরণ ? —এমনি । —তবুও ? —স্বযনি শাক তুলচি– বলেই হঠাৎ সলজ্জ হাসি হেসে আচল দেখিয়ে বললে—মিথ্যে কথা বলবো না বামুনের মেয়ের সামনে । এই দ্যাথো— অনঙ্গ-বৈ বিস্ময়ের সঙ্গে বললে—ও কি হবে ? হাস আছে বুঝি ? গয়লা-বৌয়ের আঁচলে এক রাশ কাদামাখা গেড়ি-গুগলি । সে বললে—হাস নয় ভাই, আমরাই খাবো । —ও কি করে খায় ? —এমনি ! শাস বের করে ঝাল-চচ্চড়ি হবে। —সত্যি ? —অনেকে খায়, তুমি জানো না! আমরা শখ করে থাই ভাই । —কি করে রাধে আমাকে বলে দিও তো ? —না ভাই। তুমি খেতে যাবে কি দুঃখে ? তোমাকে বলে দেবো না । সেদিনই একটু বেলা হোলে কপালীদের ছোট-বে এসে বললে—এক খুচি চাল ধার দিতি পারো ভাই ? বড় লজ্জায় পড়িচি--- অনঙ্গ-বেী বললে—কি ভাই ? —ভূষণ কাকার বেী এসেচে দুটো চাল নিতি। দু'দিন ভাত পেটে যায় নি। দুটো গেড়ি-গুগলি তুলে এনেচে সেন্দ করে খাবে। কিন্তু দুটো চাল নেই—আমার বাড়ী এসেচে —ত বলে, তুমি থাও ভীডে জল, আমি খাই ঘাটে— —আমারও চাল নেই ভাই । —দু’টো একটা হবে না ?