পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত २¢* —আছে, দেবার মত নেই। তোর কাছে মুকুবে না। সের চারেক চাল আছে, তা থেকে দেবো না । তিন বেলার খোরাকও নেই ? কপালী-বোঁ বসে পড়ে গালে হাত দিয়ে টেনে টেনে বললে—তাই তো, কি হবে উপায় দিদি ? চাল তো কোথাও নেই। কি করি বল তো ? অনঙ্গ-বেী বললে—ছিল বিশ্বেস মশায়, তার ঘরে যা হয় দুটাে ধান চাল ছিল। সেও চলে গেল— - —আমরাও তো তাই বলি– —তবে কোন সাহসে চাল দেবো বের করে ? —তা তো সত্যি কথাই । হঠাৎ অনঙ্গ-বোঁ হেসে বললে—রাগ করলি ভাই ছোট-বোঁ ? —না ভাই, এর মধ্যে রাগ কিসের ? —র্তাচল পাত । চাল নিয়ে যা— —তোমাদের ? —যা হয় হবে। তবু থাকতে দেবো না তা কি হয় ? নিয়ে যা— দিন কতক পরে চালের ঘোর অনটন লোকের ঘরে ঘরে। প্রত্যেকে প্রত্যেঙ্গর বাড়ী এসে চাল ধার চায়, কে কাকে দেবে ? অনঙ্গ-বেী দুদিন ছেলেদের মুখে ভাত দিতে পারলে মা, শুধু সজনে শাক সেদ্ধ। একদিন এসে কাপালী-বোঁ দুটাে মুষনি শাক দিয়ে গেল, একদিন গঙ্গাচরণ কোথা থেকে একখানা থোড় নিয়ে এল। ভাতের ফ্যান চেয়ে ঘরে ঘরে ফিরচে ত্রিপুরা জেলা থেকে আগত ময়েপুরুষ। গ্রামে হাহাকার পড়ে গেল। সন্ধ্যার দিকে রামলাল কাপালী এসে গঙ্গাচরণকে চুপি চুপি বললে—পণ্ডিত মশায়, চাল নেবেন ? গঙ্গাচরণ বিস্ময়ের সুরে বললে—কোথায় ? —মেটেরা বাজিতপুর থেকে আমার শ্বশুর এক বস্তা চাল নিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে এসেচেন আমার বাড়ী। দেড় মণ চাল, বেনামুড়ি ধানের ভাল চাল। ছোট-বে বললে—বামুনদিদির বাড়ী বলে এসে । —কি দর ? —শ্বশুর বলচেন চল্লিশ টাকা করে মণ— —আউশ চালের মণ চল্লিশ টাকা ? —তাই মিলচে না দাদাঠাকুর । আপনি তো সব জানে । গঙ্গাচরণ ইতস্ততঃ করতে লাগলো। দু'গাছ পাতলা কুলি অাছে অনঙ্গ-বেয়ের হাতে। একবার গেলে আর হবে না । কিন্তু উপায় কি ? ছেলেপুলেকে বাচিয়ে রাখতে হবে তো ? বাড়ীতে এসে স্ত্রীর কাছে