পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sశి - বিভূতি-রচনাবলী যেমন দীর্ঘ বনঝাউ ও কাশ জঙ্গলের আড়ালে পড়ে, তখন মনে হয় সমস্ত পৃথিবীতে আমি একাকী। তার পর যত দূর যাওয়া যায়, চওড়া মাঠের দু-ধারে ঘন বনের সারি বহুদূর পর্য্যন্ত চলিয়াছে, শুধু বন আর ঝোপ, গজারি গাছ, বাবলা, বন্ত কাটা-বাশ, বেত ঝোপ । গাছের ও ঝোপের মাথায় মাথায় অস্তোন্মুখ স্বৰ্য্য পিছর ছড়াইয়া দিয়াছে—সন্ধ্যার বাতাসে বন্তপুপ ও তৃণগুলোর স্বভ্রাণ, প্রতি ঝোপ পাখীর কাকলীতে মুখর, তার মধ্যে হিমালয়ের বনটিয়াও আছে। মুক্ত দূরপ্রসারী তৃণাবৃত প্রান্তর ও খামল বনভূমির মেলা। এই সময় মাঝে মাঝে মনে হইত যে, এখানে প্রকৃতির যে-রূপ দেখিতেছি, এমনটি আর কোথাও দেখি নাই। যত দূর চোখ যায়, এ সব যেন আমার, আমি এখানে একমাত্র মহিষ, আমার নির্জনতা ভঙ্গ করিতে আসিবে না কেউ-মুক্ত আকাশতলে নিস্তব্ধ সন্ধায় দুর দিগন্তের সীমারেখা পৰ্য্যন্ত মনকে ও কল্পনাকে প্রসারিত করিয়া দিই। কাছারি হইতে প্রায় এক ক্রোশ দূরে একটা নাবাল জায়গা আছে, সেখানে ক্ষুদ্র কয়েকটি পাহাড়ী ঝরণা ঝির ঝির করিয়া বহিয়া যাইতেছে, তাহার দু-পারে জলজলিলির বন,কলিকাতার বাগানে যাহাকে বলে স্পাইডার-লিলি। বহু স্পাইডার লিলি কখনও দেখি নাই, জানিতামও না যে, এমন নিভৃতি ঝরণার উপল-বিছানো তীরে ফুটন্ত লিলি ফুলের এত শোভা হয় বা বাতাসে তাহারা এত মৃদ্ধ কোমল মুবাস বিস্তার করে। কতবার গিয়া এখনটিতে চুপ করিয়া বসিয়া আকাশ, সন্ধ্যা ও নিৰ্জ্জনতা উপভোগ করিয়াছি। মাঝে মাঝে ঘোড়ায় চড়িয়া বেড়াই। প্রথম প্রথম ভাল চড়িতে পারিতাম না, ক্রমে ভালোই শিখিলাম। শিথিয়াই বুঝিলাম জীবনে এত আনন্দ আর কিছুতেই নাই। যে কখনও এমন নিৰ্জ্জন আকাশতলে দিগন্তব্যাপী বনপ্রান্তরে ইচ্ছামত ঘোড়া ছুটাইয়া না বেড়াইয়াছে, তাহাকে বোঝানো যাইবে না সে কি আনন্দ। কাছারি হইতে দশ পনের মাইল দূরবী” স্থানে সার্ভে পাট কাজ করিতেছে, প্রায়ই আজকাল সকালে এক পেয়াল চা খাইয়া ঘোড়ার পিঠে জিন কষিয়া সেই যে ঘোড়ায় উঠি, কোনদিন ফিরি বৈকালে, কোনদিন বা ফিরিবার পথে জঙ্গলের মাথার উপর নক্ষত্র উঠে, বৃহস্পতি জল জল করে ; জ্যোৎস্নারাতে বনপুষ্পের সুবাস জ্যোৎস্নার সহিত মেশে, শৃগালের রব প্রহর ঘোষণা করে, জঙ্গলের ঝি ঝি পোকা দল বধিয়া ডাকিতে থাকে। R যে কাজে এখানে আসা তার জন্য অনেক চেষ্টা করা যাইতেছে। এত হাজার বিঘা জমি, হঠাৎ বন্দোবস্ত হওয়াও সোজা কথা নয় অবশ্ব । আর একটা ব্যাপার এখানে আসিয়া জানিয়াছি, এই জমি আজ ত্রিশ বছর পূৰ্ব্বে নদীগর্তে সিকস্তি হইয়া গিয়াছিল—বিশ বছর হইল বাহির হইয়াছে—কিন্তু যাহার পিতৃপিতামহের জমি গঙ্গার ভাঙ্গিয়া যাওয়ার পরে অন্যত্র উঠিয়া গিয়া - বাস করিয়াছিল, সেই পুরাতন প্রজাদিগকে জমিদার এই সব জমিতে দখল দিতে চাহিতেছেন