পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২৬৫ গল্প নেই—চাল থাকতেও পারে এ বিশ্বাস হোল গঙ্গাচরণের ! খুঁজে খুজে সেই গোয়ালা-বাড়ী বারও হোল। ব্রাহ্মণ দেখে গৃহস্বামী ওকে যত্ন করে বসালে, তামাক সেজে নিয়ে এল । গঙ্গাচরণ বললে—জায়গাটা তোমাদের বেশ । আসল কথা কিছু বলতে সাহস করচে না, বুক চিপ ঢিপ করচে ! কি বলে বসে কি জানি! চাল না পেলে উপোস শুরু হবে, সবমুদ্ধ। গৃহস্বামী বললে—আজ্ঞে হ্যা। তবে ম্যালেরিয়া খুব । —সে সৰ্ব্বত্র । —আপনাদের ওখানেও আছে ? নতুন গারে বাড়ী আপনার ? সে তো নদীর ধারে। —ত আছে বটে, তবু ম্যালেরিয়াও আছে। —এদিকে যাচ্ছিলেন কোথায় ? —তোমার এখানেই আসা । —আমার এখানেই ? সে আমার ভাগ্যি। ব্রাহ্মণের পায়ের ধুলো পড়লো। তা কি মনে করে ? —ভরে বলবো না নির্ভরে বলবো ? —সে কি কথা বাবাঠাকুর। আমাদের কাছে ও কথা বলতে নেই! বলুন কি জন্তে আসা ? —তোমার বাড়ী চাল আছে সন্ধান পেয়ে এসেচি। দিতেই হবে কিছু। না খেয়ে মরচি একেবারে । গৃহস্বামী কিছুক্ষণ গুম্‌ হয়ে থেকে বললে—আপনাকে বলেচে কে ? —আমাদের গ্রামেই নেচি । —বাবা ঠাকুর, চাল আমার আছে, মিথ্যে কথা বলবো না। আপনি দেবতা। কিন্তু সে চাল বিক্রি করবার নয় । —কত আছে বলবে— —তিন মণ। কুকিয়ে রেখেছিলাম, যেদিন গবর্ণমেণ্টের লোক আসে কার ঘরে কত চাল আছে দেখতে, সেদিন মাটির মধ্যে পুতে রেখেছিলাম বলে চালগুনো একটু গুমে গন্ধ হয়ে গিয়েচে । ধান নেই, শুধু এই চাল কটা সম্বল। ও বিক্রি করলি—আমরা কাচ্চ বাচ্চা নিয়ে ঘর করি, রাগ করবেন না, অভিসম্পাত দেবেন না বাবাঠাকুর। দিতি পারলি দিতাম। ওই কটা চাল ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল নেই। ব্রাহ্মণের পারে হাত দিয়ে বলচি । চাল পাওয়া গেল না। ফিরে আসবার পথে গঙ্গাচরণ চোখে অন্ধকার দেখলে। সাধু কাপালীও সঙ্গে ছিল ওর। ক্রোশ দুই এসে ওদের বড় খিদে ও জলতেই পেলো। সাধু বললে—পণ্ডিত মশাই, আর তো ইটো যায় না। —তাই তো দেখছি। কাছে কি গা ?