পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ২৬৯ মতি মুচিনী বিরক্ত হয়ে বললে—তখুনি বললাম তুমি এসে না। এখানে আসা কি তোমার কাজ ? কক্ষনে কি এসব অভ্যেস আছে তোমার ? সরো দেখি– মতি এসে কাটা ছাড়িয়ে দিলে। অনঙ্গ-বেী রাগ করে বললে—চুলি তো এই সনোবেলা ? মতি হেসে বললে—নেয়ে মরো এখন বামুন-দিদি। —য ঘ, আর মজা দেখতে হবে না তোমার—ঢের হয়েচে । আরও এক ঘণ্টা কেটে গেল। মস্ত বড় মেটে আলু লতার গোড়া খুঁড়ে সের পাচ-ছয় ওজনের বড় আলুটা তুলতে ওরা সবাই ধেমে নেয়ে উঠেচে। মতি মুচিনী মাটি মেখে ভূত হয়েচে, কপালী-বোঁ লতার জঙ্গল টেনে ছিড়তে ছিড়তে হাত লাল করে ফেলেচে, অনঙ্গ-বেী একটু আনাড়ির মত আলুর একদিক ধরে বৃথা টানাটানি করচে গৰ্ত্ত থেকে সেটাকে তুলবার প্রচেষ্টায় । কাপালী-বোঁ হেসে বললে—রাখে, রাখে বামুন-দিদি, ও তোমার কাজ নয়। দাড়াও একপাশে--- বলে সে এসে দু'হাত দিয়ে টানতেই আলুটা গৰ্ত্ত থেকে বেরিয়ে এল। অনঙ্গ-ৰোঁ অপ্রতিভের হাসি হেসে বললে—আমি পারলাম না-বাবা:– —কোথা থেকে পারবে বামুন-দিদি—নরম রাঙা হাতের কাজ নয় ওসব । —তুই যা—তোকে আর ব্যাখ্যান কত্তে হবে না মুখপুড়ী— এমন সময় এক কাও ঘটলো । সেই ঘন ঝোপের দূর প্রাস্তে একজন দাড়িওয়ালা জোয়ান মত চেহারার লোকের আকস্মিক আবির্ভাব হোল । লোকটা সম্ভবতঃ মেঠো পথ দিয়ে যেতে যেতে নদীতীরের ঝোপের মধ্যে নারীকণ্ঠের হাসি ও কথাবার্তা শুনতে পেয়ে এদিকে এসেচে। কিন্তু তার ধরনধারণ ও চলনের ভঙ্গি, চোখের দৃষ্টি দেখে সৰ্ব্বপ্রথমে অনঙ্গ-বৌয়ের মনে সন্দেহ জাগল। ভাল নয় এ লোকটার মতলব। ঝোপের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়েকে দেখেও ও কেন এদিকেই এগিয়ে আসচে? যে ভদ্র হবে, সে এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করবে ? মতি এগিয়ে এসে বললে—তুমি কে গা ? এদিকি মেয়েছেলে রয়েচে—এদিকি কেন আসচে ? কাপালী-বেীও জনাস্তিকে বললে—ওমা, এ ক্যানধারা নোক গা ? লোকটার নজর কিন্তু অনঙ্গ-বৌয়ের দিকে, অন্ত কোনদিকে তার দৃষ্টি নেই। সে হন হন করে সোজা চলে আসচে অনঙ্গ-বেীরের দিকে। অনঙ্গ-বেী ওর কাণ্ড দেখে ভয়ে জড়সড় হয়ে মতির পেছন দিকে গিয়ে দাড়ালে । তার বুক চিপ টিপ করচে–ছুটে যে একদিকে পালাবে এ তেমন জায়গাও নয়। তখনও লোকটা থামে নি। মতি চেচিয়ে উঠে বললে—কেমন নোগ গা তুমি ? ঠেলে আসচে যে ইদিকে বড়ো ? কাপালী-বেী এসময়ে আরও পিছিয়ে গিয়েছে। কারণ কাছাকাছি এসে লোকটা ওর