পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত - २१> —নাও, নাও বামুন-দিদি, রাগ কোরো না— —হয়েচে । এখন চলে এখান থেকে বেরিয়ে—বেলা নেই। এতক্ষণ ওদের যেন সেদিকে দৃষ্টি ছিল না—এখন হঠাৎ ঝোপ থেকে উকি মেরে সবাই চেয়ে দেখলে সবাইপুরের বাওড়ের ওপারে নোনাতলা গ্রামের বাশবনের আড়ালে কতক্ষণ পূৰ্ব্বে স্বৰ্য্য অস্ত গিয়েচে, ঘন ছায়া নেমে এসেচে বাওড়ের তীরে তীরে, বাওড়ের জলের কচুরিপানার দামের ওপর। আবার কি উৎপাত না জানি হয়, সন্ধ্যেবেলা । মাত্র তিনটি মেয়েছেলে তেপান্তর মাঠের মধ্যে । অনঙ্গ-বেী বললে—বাবা:–এখন বেরোও এখান থেকে । মতি বললে—বা রে, মেটে আলুট ? —কি হবে তাই ? —অত বড় মেটে আলুট ফেলে যাবা ? কাল থাকবে ? এই মন্বস্তরের সময়ে ? কথাটা সকলেরই প্রাণে লাগলো। থাকবে না মেটে আলু। আজকাল গ্রামের লোক সব যেন কেমন হয়ে উঠেছে। সন্ধান পাবেই। কাপালী-বে বললে—তাই করে বামুন-দিদি। আলুটা নেওয়া যাক—নোক সব হন্তে হয়ে উঠেচে না থেতি পেয়ে। বুনে কচু আলু কিছু বাদ দিচ্চে না, সব্বদা খুঁজে বেড়াচ্চে বনে জঙ্গলে। ওই আলুটা তুললে আমাদের তিন বেলা খাওয়া হবে। আবার সবাই মিলে আলুর পিছনে লাগলো এবং যখন সকলে মিলে গৰ্ত্ত হতে মেটে আলুট বের করে উপরে তুলে ধুলো ঝাড়ছে—তখন সন্ধ্যার পাতলা অন্ধকার মাঠ-বন ঘিরে ফেলেছে। মতি মুচিনী নিজেই অত বড় ভারি আলুটা বয়ে নিয়ে চললো, মধ্যে অনঙ্গ-বেী, পেছনে শাবল হাতে বা পালী-বে। ওরা সেই সন্ধ্যার অন্ধকারে চারিদিকে সশঙ্ক দৃষ্টিতে চাইতে চাইতে গ্রামের মধ্যে এসে ঢুকলো । গ্রামে ঢুকবার আগে অনঙ্গ-বে বললে—এই ছড়ি, আজকের কথা ওই সব যেন কাউকে বলিস নে— কপালী-বেী ঘাড় নেড়ে বললে—না:– —বডড পেট-আলগা তুই, পেটে কোনো কথা থাকে না— —কেন, কবে আমি কাকে কি বলিচি ? —সে হিসেব এখন বসে বসে দেবার সময় নেই—মোটের ওপর একথা কারে কাছে— —কোন কথা ? মেটে আলুর কথা ? —আবার স্বাকামি হচ্চে ? স্বাখ ছুটকি, তুই কিন্তু দেখবি মজা আমার হাতে আজ। তুমি বুঝতে পারচো না কোন কথা ? নেকু! কাপালী-বেী, আবার হি-হি করে হেসে ফেললে—কি কারণে কে জানে। অনঙ্গ-বেী বললে—এ পাগলকে নিয়ে আমি এখন কি করি ? তুই বলবি ঠিক-না ? কাপালী-বোঁ হাসি থামিয়ে আশ্বাস দেওয়ার স্বরে বললে—পাগল বামুন-দিদি ? তোমায়