পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত さbや কপালীদের বড়-বোঁকে বলে-ওর খিদে পেয়েছে মুখে একটু মধু স্থাও খুড়ী— —মধু খেয়ে বমি করেছে দুবার। মধু পেটে রাখছে না। —তবে কি দেবে খুড়ী, দুধ একটু জাল দিয়ে দেবো ? —অত ছোট ছেলে কি গাইয়ের দুধ খেতে পারে? আর ইদিকি আঁতুড়ে পোয়াতি ঘরে, তার খাবার কোনো যোগাড় নেই। হিম হয়ে বসে থাকলে চলবে না বাবাঠাকুর, এর যোগাড় কর । গ্রামে কোনো কিছু মেলে না, হাটেবাজারেও না । আট সুজি বা চিনি আনতে হোলে যেতে হবে মহকুমা শহরে সাপ্লাই অফিসারের কাছে। গঙ্গাচরণ দু-একজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলে, মহকুমা শহরেই যেতে হবে। সাড়ে সাত ক্রোশ পথ । সকালে রওনা হয়ে বেল এগারোটার সময় সেখানে পৌছলো। এখানে দোকানে অনেক রকম জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। গঙ্গাচরণের হাতে পয়সা নেই, জলখাবারের জন্ত মাত্র দু আন রেখেছিল, কিন্তু থাবে কি, চিড়ে পাঁচসিকে সের, মুড়িও তাই। মুড়কি চোখে দেখবার জো নেই। দু' আনার মুড়ি একটা ছোট বাটিতে ধরে। ক্ষেত্র কণপালী বললে—ও দাদাঠাকুর, এ যে ভয়ানক কাণ্ড দেখছি। খাবা কি ? গঙ্গাচরণ ও ক্ষেত্র কীপালী সাপ্লাই অফিসারের আপিসে এসে দেখলে সেখানে রথযাত্রার ভিড়। আপিসঘরের জানলা দিয়ে পারমিট বিলি করা হচ্চে, লোকে জানলার কাছে ভিড় করে দাড়িয়ে পারমিট নিচে । সে ভিড়ের মধ্যে ছত্রিশ জাতির মহাসম্মেলন। দস্তুরমত বলবান ব্যক্তি ছাড়া সে ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ অসম্ভব। ঘরের মধ্যে থেকে মাঝে মাঝে তাড়া শোনা, যাচ্চে, লোক জন কিছু কিছু পিছিয়ে আসচে, কিছুক্ষণ পরেই আবার পূর্বের অবস্থা, ভিড়ের স্থিতিস্থাপকত্ব দিব্য বেশি। গঙ্গাচরণ হতাশভাবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে। ভিড় কমবার নাম নেই,—বরং ক্ৰমবৰ্দ্ধমান। গরমও তেমনি, আকাশে মেঘ জমে গুমটের স্বষ্টি করেচে। এক ঘণ্টা কেটে গেল—হঠাৎ ঝুপ করে জানলা বন্ধ হয়ে গেল। শোনা গেল হাকিম আহার করতে গেলেন, আবার কখন আসবেন তার কিছু ঠিক নেই। ভিড় ক্রমে পাতলা হয়ে এল—লোকজন কতক গিয়ে আপিসের সামনে নিমগাছের তলায় বসে বিড়ি টানতে লাগলো। ক্ষেত্র কাপালী বললে—ঠাকুরমশাই, কি করবেন ? —বসি এসে । —চলুন, বাজারে গিয়ে খোজ করি। যদি দোকানে পাই। এ ভিড়ে চুকতি পারবেন না। বাজারে গিয়ে প্রতি দোকানে, খোজ করা হোল। জিনিস নেই কোনো দোকানে। পাতিরাম কুণ্ডর বড় দোকানে গোপনে বললে—মুজি দিতে পারি দেড় টাকা সের। লুকিয়ে নিয়ে যাবেন সন্দের পর ।