পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত Հե (է গঙ্গাচরণের গলা কেঁপে গেল, বুকের মধ্যে চিপ টিপ করতে লাগলো। হাত-পা কাপতে লাগলো । সে বললে—হজুৰ, আমার স্ত্রী জাতুড়ে। কিছু খাবার নেই, জাতুড়ের পোরাতি, কি খায়, না আছে একটু আটা— হাকিম ধমকের মুরে বললেন—অীঃ কি চাই ? —আটা, চিনি, মুজি, একটু মিছরি— —ওসব হবে না । —না দিলে মরে যাবে হুজুর। একটু দয়া করে— —হবে না। অধিসের আট হবে, একপোয় মুজি, একপেীয়া মিছরি— বলেই খপ্ খপ্ করে কাগজ লিখে হাকিম গঙ্গাচরণের হাতে তুলে দিয়ে বললেন—যাও— —হুজুর, পাচ-ছাঁকোশ দূর থেকে আসচি। এতে ক'দিন হবে হুজুর। দয়া করে কিছু বেশি করে দিন— —আমি কি করবো ? হবে না। যাও— গঙ্গাচরণ হাত জোড় করে বললে—গরীব ব্রাহ্মণ, দয়া করে আমায়— হাকিম বিরক্তির সঙ্গে হাত বাড়িয়ে বললেন—দেখি কাগজ ? যাও, এক সের আটা— যত বিরক্ত । লোকজনের ধাক্কায় গঙ্গাচরণকে ছিটকে পড়তে হোল জানলা থেকে। পেছন থেকে দু-একজন বলে উঠলো-ওম, দেরি করো কেন ? কেমনধারা লোক তুমি ? সরো— চাপরাশি চেচিয়ে বললে—হঠ, যাও— বাজারে দোকান থেকে আট কিনতে গিয়ে দেখলে আট এবং স্বজি দুই-ই খারাপ। একেবারে খাদ্যের অনুপযুক্ত নয় বটে তবে জিনিস ভালও নয়। একটা ময়রার দোকানে ওরা খাবার খেতে গেল। ক্ষেত্র কাপালীর বড় ইচ্ছে সে গরম সিঙাড়া খায়। শহর বাজারে তো প্রায় আসা হয় না-থাকে নিতান্ত অজ পাড়াগারে । কিন্তু খাবারের দোকানে সিঙাড়া কিনতে গিয়ে সে দেখলে পানের খিলি অপেক্ষ একটু বড় সিঙাড়া একখানার দাম দু পয়সা । জিনিসপত্রের আগুন দর। সদেশের সের এ অঞ্চলে চিরকাল ছিল দশ আনা বারে আনা, এখন তাই হয়েচে তিন টাকা। রসগোল্লা দুটাকা । ক্ষেত্র কাপালী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে—কোনো জিনিস কিনবার জো নেই ঠাকুরমশাই! —তাই তো দেখচি— —কি খাবে বলুন তো। এ তো দেখচি এক টাকার কম খেলি পেট ভরবে না। আপনি খাবা না ? —না, আমি কি খাবো। আমার খিদে নেই। —সে হবে না ঠাকুরমশাই। আমার কাছে যা পয়সা আছে, দুজনে ভাগ করে খাই। গঙ্গাচরণ ধমক দিয়ে বললে—কেন মিছে মিছে বাজে কথা বলিস ? খেয়ে নিগে যা