পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩০৫

অশনি-সংকেত Հեrծ —তারপর সে ছোকরা আজ তিন মাস পরে এসে জুটেচে। এখন আর পাগল নেই, সেরে গিয়েচে । তাকে নেবে বলে আমায় বললে—আপনি এক মাস ছুটির দরখাস্ত করুন— —আপনি করে দিলেন ? —দিতে হোল। হেডমাস্টার নিজে আমার টেবিলে এসে বলে লিখুন দরখাস্ত। লিখলাম। কি আর করি। তখুনি মঞ্জুর করে দিলে। এখন দেখুন বিপদ । ঘরে নেই চাল, তার ওপর নেই চাকরি। কি আমি এখন করি। বাড়ীমুদ্ধ যে না খেয়ে মরে। তাই ভাবলাম যাই আপনার কাছে। একটা পরামর্শ দ্যান। আর তো কেউ নেই যে তাকে দুঃখের কথা বলি। গঙ্গাচরণ মনে মনে বললে—দুঃখের কথা একবার ছেড়ে একশো বার বলে। কিন্তু বাড়ী যেতে চাও যদি, তবেই তো আসল মুশকিল। দুর্গ ভট্টচাযের মতলবখানা যে কি, তা গঙ্গাচরণ ধরতে না পেরে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে চেয়ে রইল। ছেলে দুটির চাল জোটানো যাচ্চে না, বউটার জন্তে কত কেঁদেককিয়ে এক সের আট নিয়ে আসা, এই সময় দুর্গা ভটচার্য যদি গিয়ে ঘাড়ে চাপে, তবে চোখে অন্ধকার দেখতে হবে যে দেখচি। স্ত্রীও এমন নিৰ্ব্বোধ, যদি ও গিয়ে হাজির হয় আর কাছুনি গায় তার সামনে, তবে আর দেখতে হবে না । মুখের ভাত বেড়ে দেবে। নিজে না থেয়ে ঐ বুড়োটাকে খাওয়াবে । না:, কি বিপদেই সে পড়েচে । এখন মতলবখানা কি বুড়োর ? বসে বসে গঙ্গাচরণ আকাশপাতাল ভাবতে লাগলো । যদি ছুটির পরে দুর্গ ভটচায তার সঙ্গে তার বাড়ী যেতেই চায় তবে ? না, ও চলবে না । একটা কিছু ফন্দি বার না করলেই চলবে না। এমন কিসের খাতির দুর্গা ভটচাযের সঙ্গে যে নিজের স্ত্রী-পুত্রের মুখ বঞ্চিত করে ওকে খেতে দিতে হবে ? দুর্গা ভট চাষ বলে—ছুটি দেবেন কখন ? —ছুটি ? এখনও অনেক দেরি। —সকাল বিকেল করেন, না এক বেলাই ? —এক বেলা । গঙ্গাচরণ তামাক সেজে খাওয়ালে নিজের হাতে দুর্গাকে । দুর্গ তামাক খেয়ে একমুখ ধোয়া ছেড়ে হু কোটি গঙ্গাচরণের হাতে দিয়ে বললে—এখন বড় যে বিপদে পড়ে গেলাম। চাকরি নেই, হাতে একটা পয়সা নেই—আপনার কাছে বলতে কি, আজ দু'দিন সপরিবারে না খেয়ে খিদের জালায় ছুটে এলাম, বলি কোথায় যাই ? আর তে কেউ নেই কোথাও ? মা-ঠাকরুণ দয়া করেন, মা আমার, অন্নপুন্নো আমার । তাই— এর অর্থ মুস্পষ্ট। দুর্গ ভটচার্য বাড়ীই যারে। সেজন্তেই এখনো ওঠে নি, বসে বসে তামাক খাচ্চে। দুদিন খাই নি, সে যখনই আসে, তখনই বলে দুদিন খান নি, তিনদিন খাই নি। কে মশায় তোমাকে রোজ রোজ খাওয়ায়—আর এই দুর্দিনে ? লোকের তো একটা বিবেচনা থাকা উচিত। वि. ब्र. 6->>