পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२**रै বিভূতি-রচনাবলী —আপনার কি করা হয় ? —কিছুই না। বাড়ীতে জমিজমা আছে। দুটাে গোলা ছিল ধানভৰ্ত্তি, তা শোনলাম ধান রাখতে দেবে না গবর্নমেণ্টের লোক । বিশ মণ ধানের বেশি নাকি রাখতে দেবে না— সব বিক্রি করে ফেললাম । বলা বাহুল্য এসব কথা সৰ্ব্বৈব মিথ্যা । নিধুর কিন্তু খুব শ্রদ্ধা হয়ে যায়, দু’গোলা ধানের মালিক যে ছিল এ বাজায়ে, সে সাধারণ লোক নয়, হতেই পারে না। আঠার টাকা করে ধানের মণ। দু’ গোলায় অন্তত সাত-আট শো মণ ধান ছিল । মোট টাকা রয়েছে ওর হাতে । দুর্গ তামাক টানতে টানতে বলে—বাপু হে, ঘরে চিড়ে আছে, দুটাে দিতে পার ? এ গীয়ে তোমাদের দেখছি থাস্থ্যথাদকের বড় অভাব। —আজ্ঞে, এখানে খাদ্যথাদক মেলেই না—চিড়ে ঘরে নেই ঠাকুরমশায়। বড় লজ্জায় ফেললেন--- —ন না, লজ্জা কি ? তোমাদের এ গ্রামে বাপু এই রকমই কাণ্ড । খাস্তখাদক কিছু মেলে না। কদিন থেকে ভাবছি দুটো চিড়ে ভাজ খাব। তা এ যোগাড় করতেই পারলাম না—অথচ আমার গোলায় এক পৌটি দেড় পৌটি ধান ছিল এই সেদিন । নিধু কাপালী কাচুমাচু হয়ে গেল। এত বড় লোকের সামনে কি লজ্জাতেই সে পড়ে গেল । দুর্গা বললে—যাক গে! আমসত্ত্ব আছে ঘরে ? —আজ্ঞে না, তাও নেই। ছেলেপিলেরা সব থেয়ে ফেলে দিয়েচে । —পুরনো তেঁতুল ? --আজ্ঞে না । —বড় অরুচি হয়ে গেছে মুখে কিনা। তাই দুটাে চিড়ে ভাজা, পুরনো তেঁতুল একটু এই সব মুখে—বুঝলে না ? আরে মশার, লড়াই বেধেচে বলে মুখ তো মানবে না ? এই চালকুমড়ে তোমার ? সামনে গোলার ওপরে চালকুমড়ো লতায় বড় বড় চালকুমড়ে সাদা হয়ে গিয়েচে পেকে । সারি সারি অনেকগুলো আড় হয়ে আছে গোলার চালে। নিধু কাপালী বিনীতভাবে বললে— আঞ্জে, আমারই । —দীও একখানা ভাল দেখে । বড়ি দিতে হবে । —আজ্ঞে হ্যা, এখুনি— নিধু ই ই করে ছুটে গেল এবং একটা বড় পাকা চালকুমড়ে পেড়ে নিয়ে এল গোলার চাল থেকে। দুর্গ ভট্চাষ সেটি হাতে ঝুলিয়ে গঙ্গাচরণের বাড়ীর দিকে রওনা হোল হৃষ্টমনে । অনঙ্গ-বে বললে—ওটা কি হবে জ্যাঠামশাই ?