পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত శిఫిసి এবার আমার এতগুলো ছেলেমেয়েকে খেতে দেবে কে ? এদের ঘরে তো খাবার নেই কোনোদিন এক খুচি কলাইয়ের ডাল, কোনোদিন বা একটা কুমড়ে, তাই সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়া। দুর্গ ভট্চায বুড়ো মানুষ, ওর তাতে পেট ভরে না। পেটে খিদে লেগেই আছে, খিদে কোনদিন ভাঙে না । দিন দিন দুৰ্ব্বল হয়ে পড়চে । এমন ভাবে আর কদিন এখানে চলবে ? & মতির মৃতদেহ আমতলাতেই পড়ে আছে। কত লোক দেখতে আসচে। দূর থেকে দেখে ভয়ে ভয়ে চলে যাচ্ছে। আজ যা ওর হয়েচে, তা তো সকলেরই হতে পারে! ও যেন গ্রামের লোকের চোখ ফুটিয়ে দিয়ে গেল। একটি মূৰ্ত্তিমান বিপদের সংকেত স্বরূপ ওর মৃতদেহটা পড়ে রয়েচে আমগাছটার তলায়। অনাহারে প্রথম মৃত্যুর অশনি-সংকেত। _দুর্গা ভট্চাষ বললে=তাই তোভয়, এখন কি করা যায় ? গঙ্গাচরণ সন্তুষ্ট ছিল না ওর ওপর। একপাল ছেলেমেয়ে নিয়ে এসে ঘাডে বসে খাচ্চে এই বিপদের সময় । স্ত্রীর ভয়ে কিছু বলতেও পারা যায় না । বিরক্ত স্বরে বললে—কি আর করা যাবে, সকলের যা দশা, আমাদেরও তাই হবে— —না খেয়ে আর কড দিনই বা চলবে তাই ভাবচি। একটা হিপ্পে না হলি যাই বা কোথায় ? —একটা হিল্পে কি এখানে বসে হবে, চেষ্টা করে দেখতে হবে। অনঙ্গ-বেী কাপডের ছোট্ট এতটুকু একটা পুটলি হাতে ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে বললে— এতে কি আছে বলে তো ? জ্যাঠামশাই বলুন তো এতে কি ? —কি জানি কি ? —এতে আছে শস ; বীজ, নাউয়ের বীজ আর শশক আলুর বীজ। কীপালীদের ছোট-বেী দিয়ে গিয়েচে । এ পুতে দেবো আমাদের উঠানে। গঙ্গাচরণ বললে—সে আশায় এখন বসে থাক। কবে তোমার নাউ শল ফলবে আর তাই খেয়ে দুঃখু এবার ঘুচবে। সবাইকে মরতে হবে এবার মতির মত। অনঙ্গ-বেী বললে—হঁ্যাগ, মতির দেহুট ওখানে পড়ে থাকবে আর শেয়াল কুকুরে খাবে ? ওর একটা ব্যবস্থা কর! —কি ব্যবস্থা হবে ? —ওর জাতের কেউ এ গারে নেই ? —থাকলেও কেউ আসবে না। কেউ ছোবে না মড়া । —না যদি কেউ আসে, চলে আমরা সবাই মিলে মতির সৎকার করি গে। ওকে ওভাবে ওখানে পড়ে থাকতে দেবে না। ও বড় ভালবাসতো আমার। আমারই কাছে মরতে এলো শেষকালে। ভালবাসতে বড় যে হতভাগী— অনঙ্গ-বেী আঁচলের ভাজ দিয়ে চোখ মুছলে । হৃদয় সকলের থাকে না, যার থাকে তার আনন্দও যত, কষ্টও তত। অনঙ্গ-বেী ছটফট