পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ونالا কেন জানি না, ইহাদের হঠাৎ এত ভাল লাগিল ! ইহাদের দারিদ্র্য, ইহাদের সারল্য, কটোর জীবন-সংগ্রামে ইহাদের যুঝিবার ক্ষমতা—এই অন্ধকার আরণ্যভূম ও হিমবী মুক্ত আকাশ বিলাসিতীর কোমল পুষ্পীভূত পথে ইহাদের যাইতে দেয় নাই, কিন্তু ইহুদিগকে সত্যকার পুরুষমানুষ করিয়া গডিয়াছে। দুটি ভাত খাইতে পাওয়ার আনন্দে যারা ভীমদাস টোলা ও পৰ্ব্বত হইতে ন মাইল পথ হাটিয়া আসিয়াছে বিনা নিমন্ত্রণে—তাহীদের মনের আনন্দ গ্রহণ করিবার শক্তি কত সতেজ ভাবিয়া বিস্মিত হইলাম। অনেক রাত্রে কিসের শব্দে ঘুম ভাঙিয়া গেল—শীতে মুখ বাহির করার যেন কষ্টকর, এমন যে শীত এখানে তা না-জানার দরুন উপযুক্ত গরম কাপড ও লেগ-তোশক আনি নাই। কলিকাতায় যে-কম্বল গায়ে দিতাম সেখানাই আনিয়াছিলাম—শেযরাত্রে শীতে সে যেন ঠাণ্ডা জল হইয়া যায় প্রতিদিন। যে পাশে শুইয়া থাকি, শরীরের গরমে সে-দিকটা তবুও থাকে এক রকম, অন্য কাতে পাশ ফিরতে গিয়া দেখি বিছানা কনকন করিতেছে সে-পাশে—মনে হয় যেন ঠাও পুকুরের জলে পৌষ মাসের রাত্রে ডুব দিলাম। পাশেই জঙ্গলের মধ্যে কিসের যেন সম্মিলিত পদশব্দ-কাহারা যেন দৌডিতেছে—গাছপালা, শুকনো বন-ঝাউয়ের গাছ মটু মট, শব্দে ভাঙিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে দৌডিতেছে। কি ব্যাপারখানা, কিছু বুঝিতে না পারিয়া সিপাহী বিষ্ণুবাম পাডে ও স্কুলমাস্টার গনেরা তেওয়ারীকে ডাক দিলাম। তাহারা নিদ্রাজডিত চোখে উঠিয়া বসিল—কাছারির মেঝেতে যে-আগুন জ্বালা হইয়াছিল, তাহারই শেষ দীপ্তিটুকুতে ওদের মুখে আলস্য সন্ত্রম ও নিদ্রাণুতার ভাব ফুটয় উঠিল। গনোরী তেওয়ারী কান পাতিয়া একটু শুনিয়াই বলিল—কিছু না হুজুর, নীলগাইয়ের জেরা দৌড়চ্ছে জঙ্গলে— কথা শেষ করিয়াই সে নিশ্চিন্ত মনে পাশ ফিরিয়া শুইতে যাইতেছিল, জিজ্ঞাসা করিলামনীলগাইয়ের দল হঠাৎ এত রাত্রে অমন দৌড়বার কারণ কি ? বিষ্ণুরাম পাডে আশ্বাস দিবার স্বরে বলিল—হয়তো কোনও জানোয়ারে তাড়া করে থাকবে হুজুর—এ ছাড়া আর কি। —কি জানোয়ার ? —কি আর জানোয়ার হুজুর, জঙ্গলের জানোয়ার। শের হতে পারে—নয় তো ভালু– যে-ঘরে শুইয়া আছি,নিজের অজ্ঞাতসারে তাহার কাশডাটায় বাধা আগড়ের দিকে নজর পড়িল । সে আগডও এত হালকা যে, বাহির হইতে একটি কুকুরে ঠেলা মারিলেও তাঙ্গ ঘরের মধ্যে উণ্টাইয়া পড়ে—এমন অবস্থায় ঘরের সামনেই জঙ্গলে নিস্তব্ধ নিশীথরাত্রের বাঘ বা ভালুকে বন্ত নীলগাইয়ের দল তাড়া করিয়া লইয়া চলিয়াছে—এ সংবাদটিতে যে বিশেষ আশ্বস্ত হইলাম না তাহা বলাই বাহুল্য। একটু পরেই ভোর হইয়া গেল ।