পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

voy a বিভূতি-রচনাবলী একটা পিপে। এ্যাক্টিং করছে দেখনা ঠিক যেন সঙ ! পাশের আর একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক বললেন-ও এককালে খুব নামজাদ এ্যাক্টার ছিল হে, তখন তোমরা জন্মাও নি। ওর নাম যদু হাজরা। আমি হঠাৎ ভদ্রলোকের মুখের দিকে চাইলুম, তারপর একবার বৃদ্ধ অভিনেতাটির দিকে চাইলুম। বাল্য দিনের একটা ঘটনা আমার পড়ে গেল। সেই কনকনে শীতের রাত্রি, সেই শহুরে ডেপে-ছেলেদের সঙ্গ, সেই তারা আমাকে ফেলে কোথায় পালাল—তারপর বাড়ী থেকে অনেক দূরে এক অপরিচিত গঞ্জের বাবেয়ারী আসরে ময়রার দোকানে খাবার খেয়ে আমার সেই এক বিদেশে দুদিন কাটানো । সে রাত্রে যার অভিনয় দেখে আমার বালক মন মুগ্ধ বিস্মিত উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল—সেই যদু হাজরা এই ? এক সময়ে তার যে ধরনের মুখভঙ্গি দেখে ও কথাবার্তার উচ্চারণ শুনে দর্শকের আনন্দে উন্মত্ত হয়ে উঠত, আজও যদু হাজরা সেই সব হুবহু করে যাচ্ছে আমার চোখের সামনে—অথচ দর্শকেরা খুশি নয় কেন ? খুশি তো দূরের কথা, তাদের মধ্যে অনেকে ব্যঙ্গ বিদ্রপ করছে কেন, বসে বসে এই কথাটাই ভাবলুম। মন যেন কেমন বিষন্ন হয়ে উঠল। অপব লোকের কথা কি, আমাবই তো যদু হাজরার হাব-ভাব হাস্যকর ঠেকছে! কেন এমন হয় ? বাল্য দিনের সেই যাত্রার আসরে একে আমি দেখেছিলুম, এর সেই অভিনয় এখনও স্পষ্ট মনে আছে। বিশ্বাসঘাতক সেনাপতির সঙ্গে রাজার কনিষ্ঠ পত্নী ভ্ৰষ্টা, রাজা একদিন দুজনকে নির্জনে প্রেমালাপে নিমগ্ন দেখতে পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কি ভেবে বললেন —‘মধুছন্দ, আমি প্রৌঢ়, তুমি তরুণী, এই বয়সে তোমায় বিবাহ করে ভুল করেছি। তোমার আমি এখনও ভালোবাসি, প্রাণে মারবো না—তোমরা দুজনে আমার চোখেব সামনে প্রেমিক-প্রেমিকার মতো হাত ধরাধরি করে চলে যাও । কিন্তু আমার রাজ্যের বাইরে। আর কখনও তোমাদের মুখ না দেখি।' ওরা ধরা পড়ে দুজনে ভয়ে ও লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। রাজার সামনে একাজ কেমন করে করবে ? হাত ধরাধরি করে কেমন করে যাবে? রাজা তলোয়ার খুলে বললেন—“যাও, নইলে দুজনকেই কেটে ফেলব— ঠিক ওই ভাবেই যাও। শেয়ে তারা তাই করতে বাধ্য হ’ল। রাজা স্থির দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে ছিলেন— তারা যখন কিছুদূর চলে গিয়েছে, তখন তিনি হঠাৎ উদ্রোন্তের মতো মুক্ত তলোয়ার হাতে ‘হা - হা—হ রবে একটা চিৎকার করে তাদের দিকে ছুটে গেলেন—সঙ্গে সঙ্গে তারাও আসরের বাইরে চলে গেল। মনে আছে রাজার সেই চমৎকার ভঙ্গিতে, তার হতাশ ‘হা— হা’ রবের মধ্যে এমন একটা ট্রাজিক মুর ছিল, আসরস্বদ্ধ দর্শককে তা বিচলিত করেছিল। আমি তখন যদিও নিতান্ত বালক, কিন্তু আমার মনে সেই দৃশুটি এমন গভীর দাগ দিয়েছিল যে, এই এত বয়সেও তা ভুলিনি। পরের দিন যত্ন হাজরার সঙ্গে দেখা হ'ল। ওদের যেখানে বাসা দিয়েছে, তার সামনে