পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু ○〉○ ও নিজের পার্ট বলে যেতে লাগল—দেখলুম কিছুই ভোলেনি। শেষে আমার দিকে ফিরে জলদ-গম্ভীর সুরে বললে—যাও মধুছন্দ, তোমরা দুজনে প্রেমিক-প্রেমিকার মতো হাত ধরাধরি করে চলে যাও। তারপর অমি কয়েক পা এগিয়ে যেতেই বৃদ্ধ তার সেই পুরানো ট্র্যাজিক স্বরে ‘হ-হ-হ-হা’ করে আমার দিকে উদভ্রাস্তের মতে ছুটে এল । সত্যই কি অপূৰ্ব্ব সে স্বর। কি অপূৰ্ব্ব ভঙ্গি ! ভগ্নহৃদয় বৃদ্ধ নট তার জীবনের সমস্ত ট্র্যাজেডি ওর মধ্যে ঢেলে দিলে। যেন সত্যই ও ভগ্নহৃদয় প্রৌঢ় রাজা শিথিধ্বজ, অবিশ্বাসিনী মধুছন্দা ওকে উপেক্ষা ক'রে তার তরুণ প্রেমিকের সঙ্গে হাত-ধরাধরি করে চলে গেল! অল্প কয়েক মুহূর্তের জন্যে বৃদ্ধ যন্থ হাজরা ত্রিশ বছর আগেকার তরুণ নট যদু হাজরাকেও ছাড়িয়ে গেল। এই যদু হাজরার শেষ অভিনয় । এর মাস-থানেক পরে একদিন নেবুতলায় সেই মশলীর দোকানটাতে খোজ করতে গিয়ে শুনলুম সে মারা গিয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু জীবনের মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ব্যাপার ঘটে। ভেবে দেখবার ও উপভোগ করবার জিনিস হিসেবে সেগুলোর মূল্য বড় কম নয়। সম্প্রতি আমার অভিজ্ঞতার গভীর মধ্যেই এমনই একটা ঘটনা এসে পড়েছিল--ঠিক একটা ঘটনা না বলে বরং তাকে দুটো ঘটনার সমষ্টিই বলা যেতে পারে । মধুপুরে একটা বাড়ী ভাড়া করবার দরকার ছিল—এক জায়গায় সন্ধান পেলাম— ভবানীপুরের এক ভদ্রলোকের বাড়ী আছে মধুপুরে এবং তিনি সেটা ভাড়া দেবেন। সকাল বেলা তার ওখানে গেলাম, বেল তখন দশটা । ভবানীপুরে ভদ্রলোক যে বাড়ীতে থাকেন তা বেশ বড় বাড়ী। বাইরে মুসজ্জিত বৈঠকখানা, কিন্তু তিনি তখন বৈঠকখানার পাশে একটা ছোট ঘরের তক্তাপোশের উপর বসে গুড়গুড়ির নল মুখে দিয়ে তামাক খাচ্ছিলেন । ভদ্রলোক বৃদ্ধ, বয়সে পয়ষট্টির কাছাকাছি মনে হ’ল। কিন্তু তিনি নিজেই তার বয়সের সম্বন্ধে আমার মনে কোন কল্পনার স্থান রাখলেন না । বললেন—আসুন, অামুন, বড় ভালো দিনে এসেছেন। আজ আমার জন্মতিথি কি-না, তাই বাড়ীতে একটু উৎসব গোছের আছে। ত বেশ, এসেছেন যখন আপনাকেও ছাড়ছিনে—ইত্যাদি। কারুর জন্মতিথি উৎসবে যে ভাবে তাকে মিষ্টকথা বলবার কথা—ভদ্রলোককে আমি তা বললাম। কাজের কথাটা এই উৎসবের দিনে কি ভাবে পাড়া যায় ? বা কতক্ষণ ধরে জন্মতিথিতে মঙ্গলেচ্ছা প্রকাশ সংক্রান্ত কথাবার্তা বলবার পরই বা কাজের কথা পাড়া স্বল্প হবে—কিংবা আজকার দিনে বাড়ী ভাড়ার দরদপ্তররূপ ইতরজনোচিত কথাবার্তা বলা আদৌ শোভন হবে কি-না—ইত্যাদি মনে মনে তোলা-পাড়া করছি এমন সময়ে একটি সুন্দরী তরুণী হাসিমুখে বড় একটা ফুলের তোড়া হাতে ঘরে ঢুকলেন, পেছনে একটি যুবক। গৃহকর্তা